ডেস্ক নিউজ
দেশকে এগিয়ে নিতে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর পাশাপাশি শিল্পের দিকেও সরকারে বিশেষ নজর রয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বে ধারণকৃত এক ভাষণে তিনি একথা বলেন, যা সোমবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের কৃষিটাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষিভত্তিক অর্থনীতি আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সাথে সাথে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি।
“কারণ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রপ্তানি করতে পারি, তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।”
কৃষক লীগের সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ তার কন্যা শেখ হাসিনা।
দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের কৃষকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে সকল কৃষক-কিষাণিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা- এটা আমরা বিশেষ করে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের কর্তব্য মনে করে।”
কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা দখল করল। তারা এদেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলতে শুরু করল। সার চাইতে গিয়ে ১৮ জন কৃষককে গুলি খেয়ে জীবনও দিতে হয়েছে।
“আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন থেকে দেশের কৃষকদের আর কোন কষ্ট থাকেনি। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের কল্যাণে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।”
কৃষকদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বর্গাচাষীদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
“সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ আমরা ১২ টাকায় নামিয়ে এনেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি।”
কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জাতির পিতার লক্ষ্যের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছি, ৭০ শতাংশের উপর ভর্তুকি দিচ্ছি; কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি, যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষকের জন্য উন্নতমানের বীজ সরবরাহের পাশপাশি প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে; সেচ কাজে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতেও ব্যবস্থা নিচ্ছে। সেচ কাজে সোলার-প্যানেলের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তার জন্য সরকার ‘যথাযথ দাম’ নির্দিষ্ট করছে এবং কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
“কৃষকের ঘরে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে। কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাটাও সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি।”
সাম্প্রতিক ‘হিট শকে’ ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তার ‘থোক বরাদ্দ’ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- তার জন্য যথাযথ-মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সর্ব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি গবেষণার উপর। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন, তরি-তরকারি, ফল-মূল ও দানাদার খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে, তার জন্য ব্যাপক হারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি।
“যার ফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন; ধান উৎপাদন করতে পারছেন, গম করছেন, ভুট্টা করছেন এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে কৃষকের ধান কাটার সমস্যা দূর করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার কথা তুলে ধরে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জন্য সব ধরনের যন্ত্র ধীরে ধীরে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
মহামারীর কারণে অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করে সবাইকে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশাগুলো মেনে চলারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “নিজেকে আপনারা সুরক্ষিত রাখুন, অপরকে সুরক্ষিত করুন। এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়, তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সবাই দোয়া করেন।”