ডেস্ক নিউজ
চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনার এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে দরিদ্র কৃষকের কপালে যখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ, তখন তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে সূর্যমুখী ফুল। তিন মাস আগে বপন করা বীজ থেকে বর্তমানে মাঠজুড়ে পরিপক্ব বীজ। মাঠে মাঠে শুধু ফুলের সমারোহ। মৌমাছির আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। মৌমাছির দল ফুল থেকে নির্যাস নিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। তাই এখন পরিপক্ব সূর্যমুখীর বীজ ঘরে তোলার পালা। সূর্যমুখী বীজের তেল খুব দামি। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ঝালকাঠির রাজাপুরে চলতি মৌসুমে সূর্যমুখীর ভালো ফলন হয়েছে। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বেশি লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা। রাজাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় মোট আঠারো হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় ও ভালো ফলন হওয়ায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। অধিকাংশ খেতেই এখন পরিপক্ব ফুল। কিছু কিছু খেত থেকে কৃষক ইতিমধ্যেই ফলন ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও ব্র্যাক বিনামূল্যে প্যাসিফিক হাইসন-৩৩ জাতের সূর্যমুখীর বীজ ও সার সহায়তা দিয়েছে। উপজেলা সদরের পূর্ব চররাজাপুর এলাকার কৃষক মো. সোহরাব হোসেন জানান, হাইব্রিড বীজ থেকে প্রতি একর জমিতে সূর্যমুখীর ফলন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। যা থেকে তেল পাওয়া যায় ১৫ থেকে ১৮ মণ। শুধু বীজ বিক্রি করলে প্রতি মণ বীজ দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি করা যায়। আর বীজ থেকে তেল বের করলে খৈলসহ প্রতি মণে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা পাওয়া যায়। প্রতি কেজি তেল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি করা যায়। উপজেলার পূর্ব চররাজাপুর কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল হক হাওলাদার বলেন, সূর্যমুখীর কোনো কিছু ফেলনা নয়। বীজ থেকে তেল, এরপর মাছ ও পশুখাদ্যের জন্য খৈল ও গাছ শুকিয়ে গেলে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেও ভালো ফলন হওয়ায় এ বছর বেশি লাভের আশা করছি। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রিয়াজউল্লাহ বাহাদুর বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর রাজাপুরে প্রায় দ্বিগুণ সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। ভালো ফলন ও বেশি লাভ হওয়ায় এ উপজেলায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে।