নিউজ ডেস্ক:
সুজলা সুফলা সোনার বাংলাদেশের মূল স্তম্ভ কৃষিখাত। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চাবিকাঠিও এই কৃষি। গত এক দশকে কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম।
বর্তমানে বাংলার কৃষকদের জন্য ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখের বেশি কৃষকের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে সরকারি ভাবে। যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।
সরকার কৃষকদের সম্ভাব্য সব রকম উপকরণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রবর্তিত কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেশে ও বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের অনুসরণে ভারত সরকার কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ৩৫টি জেলায় ২৫ শতাংশ ভর্তুকিতে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হারভেস্টরসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। আউশে প্রণোদনা প্যাকেজও অব্যাহত আছে।
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য পথিকৃৎ। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ইতিমধ্যে ৮০টির অধিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবন করেছে ১৭ টি ধানেরজাত। এর বাইরে বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলো ১১৫টি হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া ব্রি ও বিনার বিজ্ঞানীরা ১৬টি প্রতিকুল পরিবেশ সহিঞ্চু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে লবণ সহিঞ্চু নয়টি, খরা সহিঞ্চু দুটি ও বন্যা সহিঞ্চু পাঁচটি ধানের জাত। সব মিলিয়ে ধান গবেষণা ও উৎপাদনে বাংলাদেশ ঈর্ষনীয় অগ্রগতি লাভ করেছে। স্বাধীনতার পর দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষকে খাওয়াতে বাংলাদেশ সরকার কোনো চাল আমদানি করেনি। বাংলাদেশের পরিশ্রমী কৃষক, তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং সরকারের বিভিন্ন তৎপরতায় উৎপাদন বিপ্লবে বাংলাদেশের এ অসামান্য অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেছেন কৃষি বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের কৃষক প্রতিদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন করে যেমন দেশবাসীর খাদ্য চাহিদা পূরণ করছেন, তেমনি নিজেদের ভাগ্যেরও বদল ঘটাচ্ছেন। অর্জন করছেন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। প্রধান ফসলের পাশাপাশি নানা বিকল্প ফসল উৎপাদনেও তারা সফলতা দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। কৃষক দারিদ্রমুক্ত হওয়া মানেই, দেশের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া। কৃষিক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের সাফল্য তাই দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটায়।