প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৭ জানুয়ারি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। অনলাইনে ডিজিটাল ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’তে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া এ ভ্যাকসিন কাউকে দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনেশন অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বিষয়ক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। ব্রিফিং সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস কোভিড ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এটা একটা যুগান্তকারী কাজ। ভারতের বাইরে সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’-এর অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের বিভিন্ন কারিগরি দিক সম্পর্কে অবহিত করেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক (সার্জারি) ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা দেওয়া হবে না। ’সুরক্ষা’-এর রেজিস্ট্রেশনের বাইরে টিকা দেওয়াকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। আমাদের এই ডাটাগুলো সংরক্ষণ করতে হবে, অ্যানালাইসিস করতে হবে। অনলাইনের এই তথ্যগুলো পরবর্তী সময়ে অনেক কাজে আমাদের লাগাতে হবে।
কেন্দ্র পরিবর্তন করে টিকা দেওয়ার সুযোগ থাকছে না জানিয়ে স্বাস্থ্যের ডিজি বলেন, রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী আমরা কেন্দ্রে টিকা পাঠাবো। সেক্ষেত্রে কেন্দ্র পরিবর্তন করে টিকার সুযোগ দিলে অনেক টিকা নষ্ট হবে। নির্ধারিত তারিখ ও কেন্দ্র অনুযায়ী টিকা গ্রহণের অনুরোধ করেন ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।
ব্রিফিংয়ে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের প্রোগ্রামারদের একটি দল নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ সফটওয়্যারটি প্রস্তুত করেছে। সরকারের কোনও অর্থ ব্যয় ছাড়াই এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সরবরাহ করা হচ্ছে। নাগরিক নিবন্ধন ও ভ্যাকসিন প্রদানসহ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সুরক্ষা সফটওয়্যারটি স্বাস্থ্য অধিদফতর ব্যবহার করতে পারবে। এই সিস্টেমটির উন্নয়ন এবং পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), এটুআই এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় ‘সুরক্ষা’ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে জানানো হয়-
ক) সেলফ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন ও ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোডের ব্যবস্থা রয়েছে।
খ) ভ্যাকসিন গ্রহণ ও প্রদানের তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে যাচাই ও মনিটরিং করা যাবে।
গ) ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সম্পন্ন হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুরক্ষা সিস্টেম থেকে অনলাইনের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।
ঘ) জাতীয় পরিচয়পত্রের গেটওয়ে ‘পরিচয়’-এর মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তির পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হবে।
ঙ) নিরাপদ নিবন্ধন নিশ্চিতকল্পে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তির মোবাইল নম্বরে ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
চ) এসএমএস-এর মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন প্রদানের তারিখ ও তথ্য প্রদান করা যাবে।
ছ) নাগরিকের ভ্যাকসিন ডোজ গ্রহণ সম্পর্কিত তথ্য ‘কিউআর কোড স্ক্যান’-এর মাধ্যমে নেওয়া এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।
জ) ভ্যাকসিন প্রদান সম্পর্কিত বিভিন্ন তালিকা, পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন প্রস্তুতের ব্যবস্থা আছে।
ঝ) জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।
যেভাবে ‘সুরক্ষা’ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাজ করবে:
ক) http://www.surokkha.gov.bd ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করতে হবে।
খ) ‘নিবন্ধন’ বাটনে ক্লিক করে নাগরিক শ্রেণি সিলেক্ট করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। তারপর যাচাই বাটনে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয় যথাযথ হলে বাংলা ও ইংরেজিতে নাম ফরমে দেখা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ, কোমরবিডি আছে কিনা, হ্যাঁ অথবা না সিলেক্ট করতে হবে।
গ) নিবন্ধনকারী নাগরিকের পেশা এবং সরাসরি কোভিড-১৯ কাজের সাথে জড়িত কিনা তা নির্বাচন করতে হবে।
ঘ) যে মোবাইলে ভ্যাকসিনের তথ্য ও ভেরিফিকেশন এসএমএস পেতে চান তা নিবন্ধনের সময় দিতে হবে।
ঙ) ফরমে বর্তমান ঠিকানা ও টিকা কেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে।
চ) সব শেষে মোবাইলে প্রাপ্ত ওটিপি দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
ছ) নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে গেলে ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
জ) নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে নির্ধারিত সময়ে এসএমএস-এর মাধ্যমে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র জানানো হবে।
ঞ) টিকাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রিন্টেড টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সঙ্গে নিতে হবে।