ডেস্ক নিউজ
চীন থেকে আসা সিনোফার্মের টিকাদান শুরুর প্রথম দিন ঢাকার চারটি হাসপাতালে ৫০১ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা সালাম সমতাকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে দ্বিতীয় ধরনের টিকা প্রয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
এদিন এই কলেজের ১৭১ জন চীনের উদ্ভাবিত এই টিকা নিয়েছেন, যা উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ।
এছাড়া মুগদা মেডিকেল কলেজের ৪৩, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ১৫৭ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ১৩০ শিক্ষার্থীদের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক সাংবাদিকদের জানান, চীনের উপহার হিসেবে পাওয়া সিনোফার্মের ৫ লাখ টিকার মধ্যে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজসহ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ১ লাখ ২০ হাজার জনকে ২ লাখ ৪০ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হবে।
বাকি টিকা পুলিশ সদস্য, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে যারা বাদ পড়ে গেছেন তাদের দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “প্রথম পর্যায়ের টিকাদান কার্যক্রমে ফ্রন্টলাইনার চিকিৎসক-পুলিশদের অনেকে টিকা পাননি। পুলিশের একটা বিরাট অংশ, প্রায় ৬০ হাজার পুলিশ সদস্য টিকা পাননি বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
“বিডার কিছু কর্মী আছে তাদেরও টিকা দিতে হবে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের এবার প্রয়োরিটি দেওয়া হবে।”
সিনোফার্মের এই টিকাদান কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগ আবার শুরু হল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, এই ৫০১ জনসহ মঙ্গলবার পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্ম মিলে দুই ধরনের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার একজন।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪০ লাখ ৮৪ হাজার ৩০ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে মঙ্গলবার চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী।
সব মিলিয়ে দেশে ৯৯ লাখ ৪ হাজার ৩১ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ এবং চীনের উপহার হিসেবে আসা সিনোফার্মের ৫ লাখ ডোজ মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট টিকা এসেছে এক ১ কোটি ছয় লাখ ডোজ।
চীন আরও ছয় লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেবে এবং বাংলাদেশ দেশটির কাছ থেকে দেড় কোটি ডোজ কোভিড-১৯ টিকা কিনবে।
মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কেনা টিকার প্রথম চালান জুনের মধ্যে আসতে পারে।
কোভিশিল্ডের মত সিনোফার্মের টিকাও নিতে হবে দুই ডোজ করে। উৎপাদকদের ভাষ্য, পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাদের টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকরিতা দেখিয়েছে।
দেশে ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে।
প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তির পর দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যায়।
এরপর ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ বেকায়দায় পড়ে। ফলে টিকাদান কর্মসূচিতে প্রথম ডোজ দেওয়া ২৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দিতে হয়।
এখন শুধু দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হলেও তাও ফুরিয়ে গেছে প্রায়। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ সময়মতো পাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা না পেয়ে চীন ও রাশিয়ার টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চীনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে সিনোফার্মের ৫ লাখ ডোজ টিকা ইতোমধ্যে এসেছে।