ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার এখন চলমান উন্নয়ন এজেন্ডাগুলোর পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারীর এই কঠিন সময়ে জনগণের জীবিকা, খাদ্য, বাসস্থান ও টিকাদান কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে জনগণ যেন কোনো ধরনের অর্থনৈতিক কষ্ট ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন অতিবাহিত করতে পারে সে লক্ষ্যে তাদের খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান ভাবনা।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্বকালে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই সভায় যোগ দেন।
প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব উন্নয়ন কর্মকা এখনই বাস্তবায়ন করা জরুরি নয়, আর তাই, এগুলোর চেয়ে তার সরকার জনগণের খাদ্য, বাসস্থান ও টিকা নিশ্চিত করার প্রতি অধিকতর জোর দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে যে তহবিল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা দিয়েই আপনাদের (মন্ত্রণালয় ও বিভাগ) উন্নয়ন কর্মকা গুলো চালিয়ে যেতে হবে। এই মুহূর্তে কোনো অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দের প্রয়োজন নেই।’ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পুনঃনিরীক্ষণের লক্ষ্যে গতকাল এই এনইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ব্যয় ও অতিরিক্ত বরাদ্দের ভিত্তিতে এটি প্রস্তুত করা হয়। সরকারপ্রধান আরো বলেন, প্রথম রাউন্ডের টিকাদান কর্মসূচি চলছে এবং দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জন্য ভ্যাকসিন কিনতে হবে।
সরকার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে অন্যান্য পেশায় যারা সরাসরি মানুষের সাথে কাজ করে, তাদেরও ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, টিকাদান কর্মসূচির জন্য আরো অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার করোনাভাইরাসের কারণে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে দেশকে টেনে তুলছে। দেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে আন্তরিকভাবে কাজ করায় সব স্তরের মানুষের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তারা দেশে এই চলমান মহামারী কিছুটা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। তবে এই ভাইরাসটি কোথাও কোথাও রূপান্তরিত হয়ে আরো শক্তিশালী হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই, আমাদেরকে এটা থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে হবে।
এক পিডি একাধিক প্রকল্পে নয়
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক জানান, সরকারের হাতে নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) প্রকল্প এলাকায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসাথে একই ব্যক্তিকে যেন একাধিক প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব না দেয়া হয়, সে নির্দেশনাও দিয়েছেন। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জয়নুল বারী এ কথা জানান। এ দিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার ২০২০-২১ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগদান করে সভাপতির বক্তব্যে এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে পরিকল্পনা সচিব ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদেরকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও আরএডিপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। এ সময় আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাজের গতি বাড়াতে প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে। সেই সাথে একাধিক প্রকল্পে একজন পরিচালক নিয়োগ করা যাবে না। একটি প্রকল্পে একজন প্রকল্প পরিচালক থাকবেন। তাকে অন্য কোনো প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া যাবে না।
সচিব বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতেও তাগাদা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রকল্পের নির্ধারিত যে সময়, সেই সময়ের মধ্যেই অবশ্যই শেষ করতে হবে। এ ছাড়া যেহেতু মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাই প্রকল্পের গতি বাড়াতেই হবে।
সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, কোনোভাবেই খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে দেয়া যাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যেন সঙ্কট তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেশি থাকার সময় গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই সঙ্কটের মধ্যে পড়েছিল। আমরা সে তুলনায় ভালো করেছি। এই অবস্থান ধরে রাখতে হবে।
সচিব বলেন, এনইসি বৈঠকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তার অংশ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি এই অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ হাজার টাকা। সংশোধিত এডিপিতে সরকারি বরাদ্দের অংশে কোনো পরিবর্তন না এলেও বৈদেশিক অংশের সাত হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ হাজার টাকা কমানো হয়েছে।