দীর্ঘ তিন বছর ঝুলে থাকার পর আলোর মুখ দেখছে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) বর্জ্য দিয়ে জ্বালানি তেল, কম্পোস্ট সার ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। গত ১২ মে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন ও অর্থায়নে সম্মতির কথা জানিয়েছে। এডিবির সম্মতি পেয়েই প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেসিসি। আগামী মাসেই দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে চলতি বছরই এই কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কেসিসি কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন ৩৭৫ টন বর্জ্য দিয়ে ১৫ টন জৈব সার, ৩০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ এবং প্রায় ৫ হাজার লিটার ডিজেল উৎপাদন করা হবে। খুলনার দৌলতপুর-শাহপুর সড়কের শলুয়া বাজারের কাছে ১৭ একর জমিতে নির্মাণ হবে এই কেন্দ্র। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি টাকা। পুরো টাকাই দেবে এডিবি।
এদিকে, নগরীর রূপসা রেল সেতুর পাশে মাথাভাঙ্গায় কেসিসির জমিতে বর্জ্য দিয়ে সার ও জ্বালানি তেল তৈরির ছোট আরেকটি কেন্দ্রের কাজ শুরু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে এই কেন্দ্রে প্রতিদিন ২০ টন বর্জ্য দিয়ে সার ও জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, প্রায় ১৫ লাখ মানুষের এই নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ টন গৃহস্থালিসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭৫০ থেকে ৮০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে কেসিসি। এর বেশিরভাগই রাজবাঁধ ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হয়। এই বর্জ্য সেভাবেই পড়ে থাকে। বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্যকে শক্তিতে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েই ২০১৯ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়।
সূত্রটি জানায়, জমি অধিগ্রহণ, প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা জরিপ, নকশা, ব্যয় প্রাক্কলন তৈরি করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এডিবির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্টিগ্রেটেড ল্যান্ডফিল অ্যান্ড রিসোর্চ রিকভারি ফ্যাসিলিটি শলুয়া’। এর পরই বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় সব থমকে যায়। গত বছর থেকে কেসিসি ও এডিবির মধ্যে ফের চিঠি চালাচালি শুরু হয়. যা চূড়ান্ত হয়েছে গত ১২ মে।
প্রকল্প থেকে জানা গেছে, শলুয়ায় দুটি বায়োগ্যাস প্লান্ট, দুটি কম্পোস্ট প্লান্ট এবং প্লাস্টিক থেকে ডিজেল উৎপাদনের পৃথক দুটি প্লান্ট থাকবে। এখানে সব কাজই হবে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। শুধুমাত্র যন্ত্র পরিচালনা, প্লান্ট ব্যবস্থাপনা ও প্রাথমিক স্তরের কাজের জন্য ৩০ জন শ্রমিক এবং ৮ জন সুপারভাইজার কাজ করবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্লান্টেই ব্যবহার করা হবে। কম্পোস্ট সার ও ডিজেল বিক্রি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ সমকালকে বলেন, খুলনায় বর্জ্য দিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট ৩টি কেন্দ্র নির্মাণ হবে। এডিবির অর্থায়নে প্রথমটি হচ্ছে শলুয়ায়। করোনা সংক্রমণসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন প্রকল্পটি ঝুলে ছিল। চলতি মাসেই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে। এরপর প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, শলুয়ায় কাজ চলার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর রাজবাঁধ এবং মাথাভাঙ্গাসহ আরও দুটি প্লান্ট নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে সেখানেও জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
খুলনার মাথাভাঙ্গায় কেসিসির ২ একর জমিতেই নির্মাণ হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের সার ও ডিজেল তৈরির কেন্দ্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়া এই প্রকল্পের কাজ গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। কেসিসির প্রকৌশলীরা এই কাজ তদারকি করছেন। ২০২৩ সালের ১৫ জুন এই কাজ শেষ হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মাসুদ ইকবাল মো. শামীম সমকালকে জানান, সারাদেশেই বিভিন্ন সংস্থা বর্জ্য দিয়ে জ্বালানি তেল ও সার তৈরির প্রকল্প নিয়েছে। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ছোট এই প্রকল্পটি নিয়েছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর অন্যান্য সংস্থা এটি দেখে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।