ডেস্ক নিউজ
খুলনায় সিআইডি পুলিশের বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ফলে এখন থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত সংগ্রহের জন্য যে সময়ক্ষেপণ হতো তা কমে যাবে। একই সঙ্গে আলামত পরীক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত তদন্ত সম্পন্নের মাধ্যমে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে।
সিআইডি সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের পুলিশ কেস ও কোর্ট মামলার আলামতসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদানের জন্য ঢাকা ও রাজশাহী ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হতো। ফলে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মামলাসমূহের আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত সংগ্রহ ও মামলাগুলোর দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে অনেক সময় লাগত। এ অবস্থা নিরসনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিআইডির এডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেলের কার্যালয় থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের পুলিশ কেস ও কোর্ট মামলার আলামতসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদানের জন্য ঢাকা ও রাজশাহী ফরেনসিক ল্যাবরেটরির পরিবর্তে খুলনায় সিআইডির বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরি প্রেরণের নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইউনিট ও আদালতে চিঠি দেওয়া হয়। ফলে খুলনা বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে সব ধরনের মাদকদ্রব্য, মৃত মানুষ ও পশু-পাখির ভিসেরা, কবর থেকে উত্তোলিত হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিস্যু, বিষাক্ত বা চেতনানাশক পদার্থের উপস্থিতি, রক্ত মিশ্রিত আলামতের রক্তের উপস্থিতি, এসিড মিশ্রিত আলামতে এসিডের উপস্থিতি, বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ, জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল প্রভৃতি আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করা সম্ভব হবে। এছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট শাখা থেকে ক্রাইমসিন হতে সংগৃহীত দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে সন্দিগ্ধ আসামিদের আঙ্গুলের ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষা এবং সংগৃহীত ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ল্যাটেন্ট প্রিন্ট ডাটাবেজে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে তল্লাশি করে মিল-অমিল সম্পর্কে মতামত প্রদান করা যাবে।
সূত্রমতে, হস্তলিপি শাখায় বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার দলিলের বিতর্কিত লেখা স্বাক্ষর জাল, নম্বর ঘষামাজা করে কিংবা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে অবমোচন করা হলে তা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান, জাল নোট ও মেকীমুদ্রা শাখায় দেশি-বিদেশি সকল প্রকার কারেন্সি নোট ও দেশি-বিদেশি সকল প্রকার কয়েন বা ধাতব মুদ্রার বিষয়ে ভিডিও স্পেকট্রাল কম্পারেটরের মাধ্যমে নোটে থাকা দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করা সম্ভব হবে।
এছাড়া বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে ফটোগ্রাফি শাখা, ব্যালিস্টিক্স শাখা, অণুবিশ্লেষণ শাখা, পদচিহ্ন শাখা, ক্রাইমসিন ইউনিট ও আইটি শাখার মাধ্যমে অপরাধীর ছবি গ্রহণ, সংরক্ষণ ও ফরেনসিক বিভিন্ন শাখার আলামতের বর্ধিত ছবি সরবরাহ এবং বিতর্কিত ছবির সঙ্গে নমুনা ছবির মিল আছে কিনা তা বিশ্লেষণ, আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধের ঘটনায় উদ্ধারকৃত বা অপরাধের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ, ফায়ার্ড কার্তুজ ও ফায়ার্ড বুলেট পরীক্ষা, অপরাধীর ব্যবহৃত গাড়ির ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর, আগ্নেয়াস্ত্রের নম্বর, প্রস্তুতকারী দেশের নাম, অপরাধীর পায়ের ছাপ বা জুতার ছাপ পরীক্ষা করে অপরাধী বা ভিকটিম শনাক্তকরণ, অপরাধস্থল পরিদর্শন করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ, ডকুমেন্টেশন এবং মামলা সংশ্লিষ্ট মোবাইলফোন, মেমোরিকার্ড, হার্ডডিক্স, ল্যাপটপ, ডিভিআর ইত্যাদি ডিজিটাল এভিডেন্স পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে আলামত প্রদান করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরির দায়িত্বরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউদ্দিন বলেন, খুলনা সিআইডিতে অনেকদিন আগে ফরেনসিক ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হলেও এতদিন তার কার্যক্রম ছিল না। ফলে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের পুলিশ কেস ও কোর্ট মামলার আলামতসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত জানার জন্য ঢাকা ও রাজশাহী ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হতো। ফলে মামলাসমূহের আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত সংগ্রহ ও মামলাগুলোর দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে অনেক সময় লাগত। কিন্তু বর্তমান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানের প্রচেষ্টায় এখানে ফরেনসিক ল্যাবরেটরি চালু হওয়ায় মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ মতামত আদালতে পাঠানো সম্ভব হবে। এই ফরেনসিক ল্যাবরেটরি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অপরাধ তদন্তেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।