এখন সমগ্র বিশ্ব সংকটাপন্ন। বাংলাদেশও নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের হৃদয় আজ শঙ্কিত। সবাই ঘরে অবস্থান করছে। আমাদের সরকার সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশেও করোনা হানা দিয়েছে। আমরা দেশের মানুষ পূর্বের তুলনায় সচেতন, অনেকে আবার আইন মানছেন না। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষকে ঘরে রাখতে তৎপর। পাশাপাশি করোনাভাইরাস টেস্ট করানোর জন্য নতুন নতুন ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু এসময় আমাদের ঘরে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া খুব জরুরি। আমাদের উচিত বাসায় থেকে প্রিয়জনদের সময় দেওয়া বা শখের কাজ করা—হতে পারে বই পড়া, ছবি দেখা, যে যে কাজে পারদর্শী।
এ সময়ে নতুন বিষয়ও শিখতে পারলে ভালো। তবে স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে মানতে হবে—নিয়মিতভাবে সাবান দিয়ে দুই হাত ধুতে হবে। সরকার ঘোষিত নির্দেশনা মানতে হবে, নতুবা বিপদ আরও বাড়বে। যদিও অনেকে মানছেন না, অযথা ঘর থেকে বের হচ্ছেন, এতে করে সবার ক্ষতি বয়ে আনছেন। কারণ এই অসতর্কতার কারণে বর্তমানে সীমিতভাবে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে, অর্থাৎ এখন ঠিক করে জানা যাচ্ছে না কীভাবে একজন আক্রান্ত হলেন। এই সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ঘরে বা বাসায় না থাকলে এই সংক্রমণ বাড়বেই। এর সঙ্গে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য যেন ঠিক থাকে, সেজন্য ঘরে বসে বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো। আমরা সকলে এই দুর্যোগ-মহামারি মোকাবিলা করছি। কারও একার পক্ষে এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, গণজমায়েত এড়িয়ে চললে, এই মহাদুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এই মহাদুর্যোগে সরকারসহ অনেকেই সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন, যারা কষ্টে আছেন, আয় রোজগার কমে গেছে, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে—এটাই আমাদের ঐতিহ্যগত শক্তি। আমাদের এই যূথবদ্ধতাই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি-সংকট মোকাবিলা করার অনন্য হাতিয়ার। নভেল করোনার এই দুর্যোগে সবাইকে ঘরে থাকলেও সহযোগিতা-সহমর্মিতার বোধকে জাগ্রত রাখতে হবে।
আমাদের দেশের একটা শ্রেণি আছে যারা সবকিছুতেই নেতিবাচক বিষয় খোঁজেন, মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বরং মানুষকে আতঙ্কিত করে-বিভ্রান্ত করেন। এই চক্র সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে সক্রিয়। এই অশুভ চক্র ধর্মকে ব্যবহার করে আমাদের ধর্মপ্রাণ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার অপপ্রয়াস চালায়। এর আগেও এমন বহু ঘটনা-উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মানুষকে সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করা গেলেও পরিশেষে এই অপশক্তি পরাজিতই হয়েছে। তবে এই মিথ্যা-বিভ্রাট সৃষ্টিকারী চক্র বারবার এই ভুল করে নিজেদের ধিক্কৃত করেছে, কিন্তু সুপথে আসেনি। এবারও এই চক্র নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়ে মানুষকে ভুল বার্তা দিচ্ছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করছে; এমনকি ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। এই সংকটময় সময়ে গুজব রটনাকারীরা হীন কাজ করছে, মানুষের পাশে না থেকে উল্টো নানা মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে দেশের ও জনগণের ক্ষতি করছে। এদের বেশ কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, এ বিষয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। তবে গুজব রটনাকারীদের অনেকে দেশের বাইরে থেকে এসব অপকর্ম করছে। বর্তমান এই সময়ে এরাই বড় মানবতার শত্রু। আমাদের সবার এই গুজবের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। স্যোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। যাচাই-বাছাই না করে কোনও কিছু শেয়ার করা যাবে না। সরকারের অনুরোধ রয়েছে জনগণ ও গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে আরও সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায়, আমাদেরকেও জেনে-বুঝে সত্য জেনে ইন্টারনেটে শেয়ার করতে হবে। নতুবা মানুষ আরও আতঙ্কিত হবে।
গুজব যারা ছড়াচ্ছেন তাদের অনেকের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে, একটি দল ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এই গুজব রটনায় জড়িত, যার প্রমাণ প্রকাশ পেয়েছে। এদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা অমূলক। তবে এই গুজব সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে, এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমন কঠিন সংকটে যারা মানুষ ও সমাজের ক্ষতি করে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
গুজব ছড়িয়ে মানুষকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে ফায়দা লুটতে দেওয়া যাবে না। এটা তারা পারবে না। মানুষের সচেতনতা ও দেশপ্রেম অতীতের মতো এই গুজব সৃষ্টিকারী অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করবেই। আমাদের এই ক্রান্তিকালে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা যত সচেতন হবো, এসব কিট তত দ্রুতই অপৃসত হবে।
নভেল করোনা সংক্রমণের এই সময়ে আমাদের সবার দায়িত্ব অনেক, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থাকলে পরিবার, সমাজ, দেশ সকলে সুরক্ষিত থাকবে। আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। নিজে সচেতন থেকে আশপাশের মানুষজনকে সচেতন করতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কোথাও কাউকে গুজব ছড়াতে দেখলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। যেকোনও প্রয়োজনে সরকারের দেওয়া হটলাইন নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই সংকট বৈশ্বিক, এটি মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আবারও অনুরোধ, সবাই ঘরে থাকুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ইনশাআল্লাহ সুদিন আবার আসবে।
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব।