নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের গুরুদাসপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকে রক্ষা করতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেওয়ার নামে নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায়। শুক্রবার সাতজন অভিযোগকারীকে তাঁর বাসভবনে ডেকে ওই টাকা ফেরত দেন তিনি।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযোগকারী আসমা বেগম ইঞ্জিরা বেগম, রাবিয়া বেগম, রিজিয়া বেগম, হাবিয়া বেগম, সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগমকে ইউএনও তাঁর বাসভবনে ডেকে নেন। সেখানে প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে অভিযোগকারীদের সাথে বৈঠক করেন ইউএনও।
এদিকে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ইউএনওর বাস ভবনের সামনে অবস্থান করেন। সংবাদকর্মীরা এ বিষয়ে জানতে ইউএনও শ্রাবনী রায়ের সাথে কথা বলতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এমনকি তাঁর মুঠোফোনটি পর্যন্ত ধরেননি। পরে বেলা ২টার দিকে ঘুষের টাকাসহ তাঁর বাসভবনের পেছনের প্রাচীরে মই বেঁধে সেখান দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় ভুক্তভোগী অনেক নারীকে।
এদিকে ঘুষের টাকা ফেরত পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে গুরুদাসপুর থানা মোড়ে সংবাদকর্মীদের সাথে কথা হয় ওই অভিযোগকারী নারীদের। তাঁরা বলেন, ইউএনও শ্রাবনী রায় বৃহষ্পতিবার রাতে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মুঠোফোনে শুক্রবার তাঁর সরকারি বাস ভবনে আসতে বলেছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসেছিলেন তাঁরা, সেখানে বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে অভিযোগকারী ৭ জনের মধ্যে ৪ জনকে ৫০ হাজার করে এবং একজনকে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের পর টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও। পরে ফেরত পাওয়া টাকার বান্ডিল সংবাদকর্মীদের দেখান অভিযোগকারীরা।
ভুক্তভোগী নারীরা অভিযোগ করে বলেন,গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথাবলে তাঁদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছিলেন।
এই ঘুষের টাকা ফেরত পেতে গত বুধবার সাহারা খাতুন ও মমতাজ বেগম বাদী হয়ে নাটোর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন। এনিয়ে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও জেলা প্রশাসকের নজরে আসে।
এরই প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহষ্পতিবার অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর মোহম্মদ মাসুম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে অভিযোগকারীদের শুনানী গ্রহন করেন। এসময় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না।
এ শুনানীতে ইউএনও শ্রাবনী রায় ছাড়াও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগীদের শুনানী গ্রহনের একদিন পরই শুক্রবার ইউএনও শ্রাবনী রায় ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন অভিযোগকারী নারীদের।
ভুক্তভোগী ওই নারীরা জানান, শুনানীর গ্রহনের পর বৃহষ্পতিবার রাতে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম তাঁদের বাড়িবাড়ি গিয়ে নিজের ভূল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে এসেছেন। এবং তাঁদের টাকা ইউএনওর মাধ্যমে ফেরত পাবেন বলেও জানিয়েছিলেন। তাঁর কথা ও ইউএনওর ফোনে আশ্বস্ত হয়ে শুক্রবার ইউএনওর বাস ভবনে এসে কথামত ঘুষের টাকা ফেরত পেয়েছেন তাঁরা। প্রাচীর টপকিয়ে পার হওয়া নারীদের মধ্যে আসমা বেগম সংবাদকর্মীদের জানান, ‘ সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়াতে ইউএনওর পরামর্শে তাঁর গাড়ি চালক জয়নাল হোসেনের সহায়তায় টাকাসহ মই বেয়ে প্রাচীর অতিক্রম করেছিলেন।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
অভিযোগকারী নারীদের তাঁর বাস ভবনে ডেকে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে একাধিকার তাঁর মুঠোফোনে বক্তব্য জানতে চাইলে ফোন ধরেননি তিনি। তাঁর বাসভবনে গেলেও সংবাদকর্মীদের সাথে কথাবলতে রাজী হয়নি। জেলা প্রশাসকও ফোন ধরেননি।