গেজেটভুক্ত প্রায় ৫৫ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার সব ধরনের তথ্য ফের যাচাই-বাছাই করা হবে। এ জন্য উপজেলায় ৪ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এসব মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ শাসনামলে (২০০২-১৪) তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু সেই সময় ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০০২’ অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের।
এসব বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কমিটির কাছে নিজেদের সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারলে তাদের গেজেট বহাল থাকবে। অন্যথায় গেজেট সনদ বাতিলের পাশাপাশি ভাতাও বন্ধ হবে।
৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সভায় যাচাই-বাছাইসংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
তথ্যগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম রোহেল।
বৃহস্পতিবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘২০০২ থেকে ২০১৪ সাল-এ সময়ের মধ্যে বিধিবহির্ভূতভাবে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন। তাদের সনদ যাচাই-বাছাইয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় ৪ সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে জামুকা। অমুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ এবং প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক ও নির্ভুল তালিকা প্রণয়নের উদ্দশ্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
২০০২ থেকে ২০১৪ সাল-এ সময়ের মধ্যে বিএনপির শাসনামলে ৪৪ হাজার এবং আওয়ামী লীগের সময় ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন।
স্বাধীনতার এত বছর পর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্ত না হলেও এ মুহূর্তে গেজেটভুক্তদের সংখ্যা কম-বেশি ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৫।
এর মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৩ জন। তাদের প্রত্যেককে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেয়া হয়।
জানা গেছে, যাচাই-বাছাই করতে উপজেলা বা মহানগর পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে এ যাচাই কমিটির প্রধান হবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য যদি বীর মুক্তিযোদ্ধা হন তবে তিনি।
স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা না হলে তবে জামুকার চেয়ারম্যান মনোনীত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কমিটির প্রধান হবেন। যিনি ভারতীয় তালিকাভুক্ত বা লাল মুক্তিবার্তায় নাম আছে অথবা যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন।
কমিটির সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার যুদ্ধকালীন কমান্ডার বা ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যাকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোনীত করবেন। আরেকজন সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার বা ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যাকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মনোনীত করবেন।
কমিটির সদস্য সচিব হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ছুটিতে থাকলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্ব পালন করবেন।
একইভাবে মহানগর কমিটির সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট মহানগর এলাকায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার বা ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যাকে মনোনয়ন দেবেন জামুকার চেয়ারম্যান।
সদস্য হবেন দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য সচিব হবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি)।
জামুকার এক কর্মকর্তা জানান, দেশের ভেতরে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাকে অবশ্যই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করার সপক্ষে তিনজন সহযোদ্ধার (ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া) সাক্ষ্য জোগাড় করতে হবে।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বরের পর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে না। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত এ কমিটি সংশ্লিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।
তবে যাচাই-বাছাই আওতার বাইরে থাকবেন বেশকিছু ক্যাটাগরির মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার ভারতীয় তালিকা, কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক প্রণীত শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেটে যাদের নাম আছে তারা এর বাইরে থাকবেন।
এ ছাড়া বিজিবির শহীদ গেজেট, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, খেতাবপ্রাপ্তদের গেজেট, মুজিবনগর, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিসিএস, সেনা, বিমান, নৌ, নৌ-কমান্ডো, পুলিশ, আনসার এর মধ্যে পড়বে না।
স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী, লাল মুক্তিবার্তা, লাল মুক্তিবার্তায় স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী), ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), যুদ্ধাহত পঙ্গু বিজিবি, যুদ্ধাহত বিজিবি, সেক্টর অনুযায়ী ভারতীয় তালিকা, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে দায়িত্বপালনকারী ও যুদ্ধাহত সেনা গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধারাও এর বাইরে থাকবেন।