ডেস্ক নিউজ
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত শুরুর পর এ ধরনের আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রেখেছে সরকার। এগুলো হচ্ছে- আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপিং, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, কিউকম, আদিয়ান মার্ট ও নিডস ডট কম বিডি। এসব প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেনসহ যাবতীয় কার্যক্রম নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অপরদিকে বিজনেস ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর নিয়ে ই-কমার্স ও ফেসবুক ব্যবসা করতে হবে- এমন বাধ্যবাধকতা দিচ্ছে সরকার।
সূত্র জানিয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই কত টাকার ব্যবসা করছে, কত টাকা লেনদেন করছে, তাদের মূলধনের পরিমাণ কত, এদের ব্যবসায়িক ধরণ সম্পর্কে জানতে মাঠে কাজ করছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ব্যাংকগুলোর কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও ইভ্যালিসহ ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন নিষিদ্ধ করেছে কয়েকটি ব্যাংক। বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর পর দেশে কর্মরত এ ধরনের অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি এ ধরনের অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য তাদেরকে আইনগত কাঠামোর আওতায় আনারও উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, বিজনেস ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর নিয়ে ই-কমার্স ও ফেসবুক ব্যবসা করতে হবে—এমন বাধ্যবাধকতা দিচ্ছে সরকার। ই-কমার্স ও ফেসবুকে ব্যবসা করতে হলে এখন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া বিজনেস ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর নিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রবিবার (১৮ জুলাই) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, ই-কমার্সে ব্যবসা করতে হলে এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি উইং করা হবে। ফেসবুকে ব্যবসা নিয়ে ওই সভায় আলোচনা তেমন না হলেও সবাইকে এখন থেকে বিজনেস ইউনিক আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর নিতে হবে। একটু সময় লাগবে। এর জন্য আমরা এক থেকে দুই মাস সময় নেবো। ব্যবসা বন্ধ হোক এটা আমরা চাই না।
জানা গেছে, ইভ্যালি ও আলেশা মার্টসহ ১০টি ই-কমার্সের সঙ্গে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের লেনদেন বন্ধ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংক। সম্প্রতি আরও তিনটি ব্যাংক এই ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের লেনদেন আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেছে। ব্যাংকগুলো হলো- সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক।
সূত্র জানিয়েছে, কার্ড ব্যবসায় এগিয়ে থাকা এসব ব্যাংকের মধ্যে কেউ-কেউ গ্রাহকদের এসএমএস ও ই-মেইলের মাধ্যমে জানানোর পাশাপাশি নিজস্ব ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ডেও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানিয়েছে। কেউ যেন প্রতারণার শিকার না হন সে লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগেই এসব ব্যাংক এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে বিভিন্ন অফারের নামে বাজার মূল্যের চেয়ে যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি করছে, পণ্য দেওয়ার আগেই টাকা নিচ্ছে অথচ সময় মতো পণ্য সরবরাহ করছে না সেসব ই-কমার্স সাইট রয়েছে এ তালিকায়। এদিকে এরই মধ্যে লোভনীয় অফার দিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম অর্থ গ্রহণ করে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনের ক্ষেত্রে লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয় নিয়ে মাঠে কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরই অন্যসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নতুন ব্যবসা পদ্ধতিতে অনলাইন বাজারগুলো ক্রেতাদের কাছ থেকে কয়েক মাস আগে অগ্রিম টাকা সংগ্রহ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য সরবরাহ করতে আরও বেশি সময় নেয়। এছাড়া, প্রায়ই তারা ক্রেতাদের জানিয়ে দেয় যে, তাদের অর্ডার করা পণ্যগুলো শেষ হয়ে গেছে বিধায় সেটা পাঠানো সম্ভব নয়। তবে মাসের পর মাস অপেক্ষার পরেও প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে ক্রেতারা তাদের টাকা ফেরত পান না বলে অসংখ্য অভিযোগ ওঠে।
অনিয়ন্ত্রিত এসব ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে উচ্চ লেনদেনের বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ক্রেতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত অগ্রিম অর্থের বিপরীতে এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনও সম্পদ নাই। অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ই-কমার্স) ইভ্যালির চলতি সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সম্পদের তুলনায় ছয় গুণের বেশি এই দেনা পরিশোধ করার সক্ষমতা ইভ্যালির নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। ওই চিঠি পাওয়ার পর অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।