ডেস্ক নিউজ
ঘিওরে গভীর পানিতে আমন ধান চাষে সফলতা এসেছে কৃষকের। পরিবেশ ও প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে উপজেলার কমপক্ষে দুই শতাধিক কৃষক এর সুফল পাবেন। বিলুপ্তপ্রায় কয়েক প্রজাতির ধান চাষে রীতিমতো রোল মডেলে পরিণত হয়েছে উপজেলার নালী ইউনিয়নের কৃষক। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিতে তারা ক্ষতি কাটিয়ে লাভবান হবেন। কৃষকদের দক্ষতায় বিলুপ্তপ্রায় বন্যাসহিষ্ণু ধান পানিতে ডুবলেও ফসল নষ্ট হয় কম। পাশাপাশি রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণও হয় কম। ফলন হয় বেশি।
সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার নিম্নাঞ্চল নালী ইউনিয়নের কুন্দুরিয়া, হেলাচিয়া, বাঠুইমুরী, নালী, গাংডুবী, দিয়াইল, কেল্লাই, মাশাইল, নিমতা গ্রামে গভীর পানিতে ধান চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষক। স্থানীয় কৃষকরা জানান, আমন ধান মূলত দুই প্রকার। রোপা ও বোনা আমন। রোপা আমন জমিতে চারা প্রস্তুত করে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। এলাকাভেদে কার্তিক-অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে পাকা ধান কাটা হয়ে থাকে। কৃষকদের গত বছর হঠাত্ বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তাই কৃষকদের আমনের জাত সংগ্রহ করা কষ্টকর হয়। পরে স্থানীয় কৃষকরা অন্যান্য জেলা থেকে বন্যাসহিষ্ণু এসব ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। বাঠুইমুরী গ্রামের কৃষক আজমত আলী বলেন, ‘পাবনা জেলার কাশিনাথপুর হাট থেকে আমনের ভাওয়াইল্যা, জুলদিঘা, মুল্লাদিঘা জাত কিনে আনা হয়। তিনি আরো বলেন, কুন্দুরিয়া ও হেলাচিয়ায় ঘিওর উপজেলার সবচেয়ে বেশি আমনের চাষ হয়। আমরা আমনের চাষ টিকিয়ে রাখছি। বোনা আমন ছিটিয়ে বোনা হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে খেতে আমনের বীজ বপন করা হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটা হয়। একে বাওয়া আমন, আছরা আমন, গভীর জলের আমন ধান বলা হয়।
কুন্দুরিয়া কৃষক সংগঠনের সভাপতি সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, অতীতে কুন্দুরিয়ায় চার/পাঁচটি জাতের আমন ধান চাষ হতো। আর আউশের ছিল তিন/চারটি জাত। কৃষি উন্নয়ন ও প্রাণবৈচিত্র্য সংস্থার বারসিকের ঘিওর আঞ্চলিক কর্মকর্তা সুবীর সরকার বলেন, বারসিক স্থানীয় জাত কৃষকের মধ্যে টিকিয়ে থাকার জন্য কৃষকদের নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর যাবত্ হঠাত্ বন্যা হওয়ার জন্য আমনের দিঘা ও ভাওয়াইল্যা তেমন ভালো হচ্ছে না। ১৯৯৮ সালের বন্যায় এখানকার জুলদিঘা, মুল্লাদিঘা, ভাওয়াইল্যার আসল জাত হারিয়ে গেছে। এখন পাবনা ও ফরিদপুরের জাতের দিঘা চাষ হচ্ছে। আমনের জাতের ধান গাংডুবী, ঠাটাংগা, দিয়াইল, নিমতা গ্রামে কিছুটা দেখা যায় নিচু জমি এবং যেখানে পানি হয় তেমন জায়গায় ছাড়া এ জাত চাষ সম্ভব নয়।
বাঠুইমুরী গ্রামের কৃষক শফিক মোল্লা হোসেন বলেন, জমি রাসায়নিক সারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই জমির প্রাণ বাঁচাতে তারা আমন জাতের ধান চাষ করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, উপজেলার নিম্নাঞ্চলে গভীর পানিতে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উপজেলায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর আমন ধান আবাদ হয়েছে। এ ধানগুলো বিলুপ্তপ্রায়। এমন কয়েকটি জাতের আমন ধান চাষে কৃষকরাও খুশি। বর্তমান সরকার নদী ও খাল খননের মাধ্যমে নিম্নাঞ্চলের বর্ষাকালের ফসল নষ্ট হওয়া কিছুটা হলেও কমে আসবে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত এসব অঞ্চলে কৃষকদের সমস্যার সমাধান ও তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন।