ডেস্ক নিউজ
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে গভীর নিম্নচাপ ও পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘ইয়াস’।
এই ঝড়ের আগাম সতর্কতা হিসেবে প্রস্তুতি সভা করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। শনিবার বিকেলে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ‘পলিসি কমিটি’র সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
সভার শুরুতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি এখনও হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে। ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেওয়া হয়েছে। নিম্নচাপ হওয়ার পর ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে এলে পরবর্তীতে সংকেত বাড়ানো হবে। ২৫ মে রাত বা তারপরে এটি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় এলাকায় শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র্রে আনতে হবে। যে করেই হোক সবাইকে শেল্টারে নিয়ে আসতে হবে, একজনকেও রেখে আসা যাবে না। এবার আমরা টার্গেট রাখব, মৃত্যুহার যেন জিরো হয়।
করোনা মহামারির মধ্যে গতবছর মে মাসে দেশে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আঘাত করেছিল, সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারের প্রস্তুতি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ে পাঁচ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র্র ব্যবহার করা হয়েছিল। আম্পানের সময়ে ১৪ হাজার ৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৪ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষকে রাখা হয়। কভিডের কারণে এমনভাবেই তিনগুণ আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার করব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবহার করা হবে। সবার জন্য মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার রাখা হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ২৩ মে’র পরে ঠিকভাবে বোঝা যাবে মন্তব্য করে এনামুর রহমান আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সব সদস্যদের এরমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। তারা প্রচার শুরু করেছেন। শেল্টার সেন্টারগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমেও প্রচার চলছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসও প্রস্তুত রয়েছে। স্কাউটের ছয় লাখ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনা খাবার মজুত রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে বাংলাদেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার বিকেলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাঙ্গামাটিতে; ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও পাবনা জেলাসহ ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
সমকালের খুলনা ব্যুরো জানায়, শনিবার সকালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর-এর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খেলা, বৃহত্তর খুলনার তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত প্রশাসন এবং রূপান্তরের অংশীজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, জনসচেতনতা তৈরি, কর্ম এলাকার সব কর্মীর ছুটি বাতিল করে স্ব স্ব কর্ম এলাকায় অবস্থানের জন্য কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রূপান্তর-এর নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন অপর নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম খোকন। রূপান্তর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ফারুক আহমেদ সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন।