ডেস্ক নিউজ
চট্টগ্রামে করোনার অমিক্রন ধরনের নতুন উপধরন ‘বিএম ১.১.১’ ও ‘এক্সবিবিতে’ সংক্রমিত রোগীর সন্ধান পেয়েছেন গবেষকেরা। ১২ জন রোগীর করোনার নমুনা বিশ্লেষণ করে এই দুই উপধরনে সংক্রমিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
নমুনা বিশ্লেষণবিষয়ক (জিনোম সিকোয়েন্সিং) এ গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক। বিশ্লেষণের ফলাফল গত বুধবার রাতে ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা’ শীর্ষক জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে প্রকাশিত হয়েছে।
এক্সবিবি অমিক্রনের অন্য উপধরনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই উপধরনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি কাজ করে না। এক্সবিবি ও বিএম ১.১.১—দুটি উপধরনই পূর্ববর্তী নানা ধরন-উপধরনের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে। এ কারণে উপধরন দুটিকে ‘রিকম্বিন্যান্ট ভাইরাস’ বলা হচ্ছে।
গবেষকেরা প্রথম আলোকে বলেন, গত সেপ্টেম্বর ও চলতি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১২ করোনা রোগীর নমুনা নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৭ রোগী এক্সবিবিতে আক্রান্ত, বাকিরা বিএম ১.১.১-এ আক্রান্ত। এক্সবিবিতে আক্রান্ত সবার বয়স ২০ থেকে ৩৫–এর মধ্যে।
গবেষক দলের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম রফিকুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক আদনান মান্নান। সহতত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিভাগের শিক্ষক ফারজানা শারমিন। গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থী কল্যাণ চাকমা, সাজ্জাদ হোসেন, সবুজ বিশ্বাস প্রমুখ। নমুনা বিশ্লেষণে সহযোগিতা করেন অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল সুইজারল্যান্ডের ফাইন্ড ডায়াগনস্টিক।
এ দুই উপধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে উপসর্গ তেমন দেখা যায় না। তবে হালকা জ্বর ও কাশি হয়। মারাত্মক কিছু হওয়ার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ঠিক কত দিনে সেরে ওঠেন, সেই তথ্য নেই।
আদনান মান্নান, গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২০২১ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় অমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশে গত বছরের ডিসেম্বরে অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। প্রথম অমিক্রনে সংক্রমিত হন জিম্বাবুয়েফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুই সদস্য। এরপর দেশে এর ব্যাপক বিস্তার ঘটে। অমিক্রনের বেশ কিছু উপধরনও ইতিমধ্যে শনাক্ত হয়েছে।
নমুনা বিশ্লেষণের পুরো কাজ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ‘নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং ল্যাব’ ও ‘রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাবরেটরিতে’।
গবেষক এস এম রফিকুল ইসলাম ও আদনান মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, এক্সবিবি পৃথিবীর ১৭টি দেশে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ। এক্সবিবি অমিক্রনের অন্য উপধরনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই উপধরনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি কাজ করে না। এক্সবিবি ও বিএম ১.১.১—দুটি উপধরনই পূর্ববর্তী নানা ধরন-উপধরনের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে। এ কারণে উপধরন দুটিকে ‘রিকম্বিন্যান্ট ভাইরাস’ বলা হচ্ছে।
আদনান মান্নান বলেন, এ দুই উপধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে উপসর্গ তেমন দেখা যায় না। তবে হালকা জ্বর ও কাশি হয়। মারাত্মক কিছু হওয়ার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ঠিক কত দিনে সেরে ওঠেন, সেই তথ্য নেই।
দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে সংক্রমণের চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা করতে দেখা গেছে। গত বছরের শেষ দিক থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে করোনার অমিক্রন ধরনের দাপট চলে। পরে ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। একই বছরের ৯ এপ্রিল করোনায় চট্টগ্রামে প্রথম কারও মৃত্যু হয়। তবে বন্দর নগরে করোনার প্রকোপ এখন অনেকটাই কম। গতকাল বৃহস্পতিবার ১২১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪৬। মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৩৬৭ জন।