ডেস্ক নিউজ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৫০০ শয্যার নতুন অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত জানা গেছে আগেই। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, হাসপাতালের সামনে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরণো একাডেমিক ভবনটির স্থলে নতুন এই অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৫০০ শয্যার অবকাঠামো হিসেবে দশ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কথা জানায় গণপূর্ত বিভাগ।
তবে নতুন করে জানা গেল, দশতলার স্থলে ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে এখানে। ২০ তলা ভবনে ফ্লোর বিন্যাসসহ (কোন ফ্লোরে কোন ওয়ার্ড) বিস্তারিত প্রস্তাবনা চেয়ে নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনা পেয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে পাঠিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান প্রস্তাবনা পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, নতুন এই ভবনটি হলে সেখানে এক ফ্লোরে ৩৬টি আইসিইউ এবং অপর এক ফ্লোরে আরো ৩৬টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেন্টার (আইসিইউর তুলনায় আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন) করার প্রস্তাবনা রয়েছে। তবে প্রতি ফ্লোরে ৩৬টির স্থলে ৫০টি করে আইসিইউ নির্বিঘ্নে স্থাপন করা যাবে বলে আমরা মনে করছি। সে হিসেবে দুই ফ্লোরে একশটি আইসিইউ স্থাপনের প্রস্তাবনা আমরা রাখছি।
এদিকে, নতুন ২০ তলা অবকাঠামো নির্মাণ হলে তাতে আরো অন্তত ১ হাজার শয্যার সংস্থান হবে বলে মনে করছে হাসপাতাল প্রশাসন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালের (বিদ্যমান ভবনে) বর্তমানে ১৩১৩ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে আড়াই হাজারের কিছু কম-বেশি (প্রায় তিন হাজার)। নতুন ভবনে প্রায় ১ হাজার শয্যার সংস্থান ধরে সবমিলিয়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২২’শ তে উন্নীতকরণের প্রস্তাবনা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে গত ৯ মার্চ এ সংক্রান্ত চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
প্রশাসনিক অনুমোদিত শয্যা সংখ্যার দ্বিগুন রোগী ভর্তি থাকে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, হাসপাতালের সক্ষমতা ও সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। অনুমোদিত ১৩১৩ শয্যার অনুকূলে এমএসআর (ওষুধ, যন্ত্রপাতি, লিনেন, গজ-ব্যান্ডেজ, ক্যামিকেল ও রি-এজেন্ট) বাজেট বরাদ্দ দিয়ে ২৬০০-২৮০০ রোগীর মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদান অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ। সার্বিক বিষয় তুলে ধরে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। তবে ২২’শ শয্যার অনুমোদন চাওয়া হলেও ২০ তলা বিশিষ্ট নতুন অবকাঠামোটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা আড়াই হাজারে উন্নীত করা যাবে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর অ্যান্ড ডিসপেন্সারি, আইসিইউ সুবিধা সম্পন্ন ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার (ওসেক), প্যাথলজি ও ক্যাজুয়াল্টির অপারেশন থিয়েটার (ওটি), রেডিওলজি ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা, আউটডোর, অপারেশন থিয়েটার (ওটি), আইসিইউ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেন্টার, সার্জারি, অর্থোপেডিক, নিউরোসার্জারি, ইউরোলজি ও চক্ষু বিভাগকে নতুন ২০ তলা ভবনে বিন্যাস করে প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে। যা এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
প্রসঙ্গত, অতিরিক্ত ৫০০ শয্যা সমপ্রসারণের প্রকল্পটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর এই অবকাঠামো নির্মাণে জায়গা চিহ্নিত করে জানাতে গণপূর্ত বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয় চমেক হাসপাতাল প্রশাসনকে। চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকোশলী মোহাম্মদ শাহজাহানের স্বাক্ষরে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি এ চিঠি দেয়া হয়। গণপূর্ত বিভাগের চিঠির প্রেক্ষিতে ৫০০ শয্যার নতুন অবকাঠামো নির্মাণে সম্ভাব্য স্থান হিসেবে হাসপাতালের সামনে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরণো একাডেমিক ভবনটির জায়গা নির্ধারণ করে হাসপাতাল প্রশাসন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণপূর্ত বিভাগের কাছে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। প্রস্তাবনাটি যাচাই-বাছাই করে তাতে সম্মতিদানের কথা জানায় গণপূর্ত বিভাগ। অর্থাৎ হাসপাতালের সামনে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরণো একাডেমিক ভবনটি ভেঙ্গে সেখানেই নতুন এই অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। গণপূর্ত বিভাগ-১ এর বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহও বলছেন, চূড়ান্ত হওয়া ওই স্থানেই (চমেক-এর পুরণো প্রশাসনিক ভবনের স্থলে) নতুন ২০ তলা ভবনটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘বর্তমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও বর্ধিতকরনের মাধ্যমে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক এক প্রকল্পের আওতায় শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর এই উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চমেক হাসপাতালসহ দেশের পুরাতন মোট ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। বাকি চারটি হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর স্যার সলিমুল্ল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজশাহী ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ৫০০ শয্যা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে হাসপাতালগুলোর কাছে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রয়োজনীয় তথ্যের মধ্যে কোন বিভাগে কতটি শয্যা বৃদ্ধি করা হবে, বিভাগ ভিত্তিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের বিবরণ ছক আকারে পাঠাতে বলা হয় চিঠিতে।
প্রসঙ্গত, মাত্র ৫০০ শয্যার অবকাঠামোতে নির্মিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বর্তমান শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩। প্রশাসনিক আদেশে ধাপে ধাপে এই শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি জনবল। অধিকন্তু ১ হাজার ৩১৩ শয্যার বিপরীতে প্রতিনিয়ত প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকছে গরিবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালে। তবে এই তিন হাজার রোগীর সেবা চলছে সেই ৫০০ শয্যার জনবলেই। তাছাড়া ৪২টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট এই হাসপাতালে স্থান সংকটও চরম পর্যায়ে। শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে, বারান্দা, করিডোর এমনকি সিঁড়িতেও রাখতে হচ্ছে রোগীকে। জনবল ও স্থানের এমন চরম সংকট নিয়ে এতদঞ্চলের বিশাল সংখ্যক রোগীর চাপ যেন আর নিতে পারছে না হাসপাতালটি। সবমিলিয়ে হাসপাতালটি বর্তমানে রোগীর ভারে বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতি হতে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে বিদ্যমান হাসপাতালের জন্য ১ হাজার শয্যা ধারণ ক্ষমতার নতুন একটি ভবন নির্মাণের পাশাপাশি নগরে বিশেষায়িত আরো তিনটি হাসপাতালের প্রস্তাব করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিনের স্বাক্ষরে ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সরকারি পর্যায়ে বিশেষায়িত হিসেবে একটি শিশু হাসপাতাল, একটি হৃদ রোগ হাসপাতাল এবং অপর একটি ট্রমা (অর্থোঃসার্জারি) হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয় চিঠিতে।