দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিলে এসেছে বর্ষার নতুন পানি। প্রতিবছরই বিলে পানি আসার সাথে সাথে মা মাছ শিকারে নেমে পড়েন জেলেরা। এবছরও পানি আসার সাথে সাথেই নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে মা মাছ শিকারে নেমেছে চলনবিলের নাটোরের অংশের জেলেরা। বিলের এই মা এবং ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত কার্যকরী প্রদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে চলনবিলে মাছ উৎপাদনে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে বলে ধারনা বিশেষজ্ঞদের। এছাড়াও রয়েছে এই মাছ শিকারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশংকাও। অতিতে এই মাছ মিখার ও চলনবিলের পানির অংশের ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে হামলা,মামলা,জখম ও হত্যাকান্ডও ঘটেছে। তাই শুরু থেকেই প্রশাসনের নজরদারীর দাবী স্থানীয়দের।
নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত দেশের সর্ববৃহৎ বিলাঞ্চলে এখন চলছে অবৈধ নানা উপায়ে মা মাছ শিকার। আর এক শ্রেণীর অসাধু জেলেরা বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে বাদাই ও কারেন্ট জালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দিনে ও রাতে মা মাছ শিকার করে হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। এভাবে প্রকাশ্যে মা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকার করে বিক্রি করলেও দেখার কেউ নেই। গত এক সপ্তাহে চলনবিলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন নদী ও খালে বন্যার পানি আসায় বিভিন্ন হাট বাজার, তাড়াশ ও সিংড়া মৎস্য আড়তে দেখা গেছে পেটে ডিম ভরপুর টেংরা, পাতাসী, পুটি, মলা, বোয়াল, শোল, মাগুড়সহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ডিম ছাড়ে মা মাছগুলো। বর্ষা মৌওসুম শুরু হলেই চলনবিলের মাছগুলো ডিম ফুটাতে থাকে। কিন্তু এই সময়টাতে মাছ ধরা একেবারেই নিষিদ্ধ। ১৯৫০ সালের মৎস্য আইন অনুযাযী ডিম এবং মা মাছগুলো শিকার আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বিলে পানি আসার সাথে সাথে মাছ শিকারে নেমে পড়েন জেলেরা। এতে করে জেলেদের জালে ধরা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মাছের ডিমগুলো। চলনবিলের বিভিন্ন মৎস্য আড়তে প্রতি কেজি টেংরা ৭’শ টাকা, পাতাসী ১২’শ টাকা, মলা ৫’শ টাকা, বোয়াল ১ হাজার টাকা, শিং মাছ ৭’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিংড়া উপজেলার মৎস্য অভয়াশ্রম দহ, জোড়মল্লিকা, নিংগইন, কতুয়াবাড়ি, সোহাগবাড়ি, সাঁতপুকুরিয়া, বিয়াশ, ডাহিয়া, নুরপুর ও আত্রাই নদী এবং বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে বাদাই, কারেন্ট, খোরা জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ডিমে ভরপুর টেংরা, পাতাসী, পুঁটি, মলা, বোয়াল, শিংসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ প্রকাশ্যে নিধন করছেন এক শ্রেণির অসাধু জেলে। কিন্তু এগুলো দেখার কেউ নাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধীক ব্যক্তি বলেন, চলন বিল থেকে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার মাছ ধরে বিক্রি করা হয়। এই বিলের দখল নেওয়া নিয়ে বহু বছর ধরেই হামলা,মামলা, জখম এমনকি হত্যাকান্ডের মত ঘটনাও ঘটেছে। এই বিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ এলাকার দখলদার ও ক্ষমতাসিনদের মধ্যে লেগেই থাকে। ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হত্যাও হয়েছে। এতো বড় অংকের টাকার মাছ তারা শুধু ক্ষমতার জোড়ে ধরে।
যখন যে এলাকার নেতা হয় তখন সে এর ভাগ নেয়। আর এই টাকার ভাগ অনেক বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছে পৌছে যায়। এই মা মাছ শিকার সহ বিলের মাছ রক্ষা করতে শুধু মৎস্য বিভাগ নয় আইন শৃংখলা বাহিনীকেও কাজে লাগাতে হবে। বিলে পানি আসলেই এলাকার কিছু ক্যাডারদের হাতে চলে আস্ত্র আর পকেটে চলে যায় টাকা। এ ব্যাপারে সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার ওয়ালিউল্লাহ মোল্লা বলেন, বিলে নতুন পানি আসার কারণে কিছু অসাধু জেলেরা মা মাছগুলো শিকার করছে। আমরা প্রথমে মাইকিং করেছি। মাইকিং শুনে যদি তারা সতর্ক না হয় তাহলে এরপর অভিযান শুরু করা হবে। চলনবিলে মা মাছ রক্ষার কোন বিকল্প নেই।