নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে যাত্রী পরিবহনে বড়সড় পদক্ষেপ নিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। বুধবার চালু হল ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। ট্রেনটির নাম রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে এটি চলবে দেশের সর্ববৃহত্ স্থলবন্দর বেনাপোল পর্যন্ত। এর ফলে বাংলাদেশ-ভারত যাত্রী চলাচলেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এই ট্রেন। এর আগে মানুষ যানজট পার হয়ে দীর্ঘ সময় পর ঢাকা থেকে বেনাপোল আসতো। বেনাপোল এক্সপ্রেস চালু হওয়ার ফলে একদিকে যেমন যাত্রীদের সাচ্ছন্দ বাড়বে তেমনি কমবে যাত্রাপথের সময়।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ এর উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বাঁশিতে ফু দিয়ে এবং সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনটির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ঢাকার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ চালু হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াতের ব্যাপক সুবিধা হবে। এই রুটে প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। এই যাত্রীদের বেশিরভাগ আসেন ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গা থেকে। পরিবহন সংকট, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানজটের কারণে যাত্রীরা নানামুখী হয়রানির শিকার হন। ফলে ট্রেন চালু হওয়ায় সেই হয়রানি লাঘব হবে বলে প্রত্যাশা সবার।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক এই বেনাপোল এক্সপ্রেসের কোচগুলো (বগি) ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। এতে বগি থাকবে ১২টি এবং আসন সংখ্যা ৮৯৬টি। এই ট্রেনে বিমানের মতো বায়ো-টয়লেট সুবিধা রয়েছে এবং আসনগুলোও আধুনিক।
পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি ইতোমধ্যে চালানো হয়েছে। অনলাইনসহ নতুন এই ট্রেনের টিকেট বিক্রি শুরু হবে দুয়েক দিনের মধ্যে। নন-এসি শোভন ৪৮৫ টাকা, এসি চেয়ার ৯৩২ টাকা, এসি কেবিন ১ হাজার ৬৭৪ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যাত্রীদের আর কোনো চার্জ দিতে হবে না।
প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। সকাল ৮টার মধ্যে ট্রেনটি বেনাপোল বন্দরে পৌঁছে যাবে। পথে যশোর, ঈশ্বরদী ও ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য সাময়িক বিরতি থাকবে।
বর্তমানে যশোর-ঢাকার মধ্যে যে ট্রেন সার্ভিস চালু রয়েছে তা ১৪টি স্থানে বিরতি দেয় এবং এতে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। সেখানে বেনাপোল-ঢাকা বিরতিহীন বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৭ ঘণ্টায় যশোর ও ৮ ঘণ্টায় বেনাপোলে পৌঁছাবে। বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যশোর রেলওয়ে জংশনে পৌঁছে ১৫ মিনিটের বিরতি এবং এ সময়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোসহ ইঞ্জিন ঢাকামুখী ঘোরানো হবে। পরে ঈশ্বরদীতে ট্রেনের চালকসহ অপারেশনাল কর্মী বদলের জন্য আরো ১৫ মিনিটের বিরতি থাকবে।
সাধারণ মানুষ জানান, ঢাকা টু বেনাপোল ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। সময় বাঁচবে, টিকেট হয়রানির শিকার হতে হবে না। পথে যানজটের শিকার হতে হবে না। আর এতে করে সরকারের অনেক রাজস্ব আয় হবে।
বেনাপোল রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন দেশের ৫ থেকে ৬ হাজার লোক ভারতে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে যান। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী বেনাপোল-ঢাকা একটি বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নেন। বেনাপোলে অবকাঠামো, ভিআইপি যাত্রীদের জন্য ওয়েটিংরুমসহ সব কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। ট্রেনটি চালু হলে যাত্রীসাধারণ স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে ঢাকা যেতে পারবেন। পর্যাপ্ত টিকেট থাকায় বেনাপোল যশোর-ঢাকাসহ সব জায়গা থেকে এই টিকেট পাওয়া যাবে। বেনাপোলসহ দেশবাসীর দীর্ঘদিনের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হতে যাচ্ছে।