ডেস্ক নিউজ
দেশে চাল, আটা ও ময়দার দাম ক্রমেই বাড়ছে। ৬০ টাকার নিচে বাজারে কোনো চাল নেই। মোটামুটি ভালো চালের দাম ৭০ টাকা। আটা ও ময়দার দামও বাড়তির দিকে। মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতা রুখতে সরকার বিদেশ থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টন গম আমদানি করছে। সরাসরি সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি পদ্ধতিতে) এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৩০ হাজার টন চাল এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টন গম কেনার চুক্তি করা হয়েছে। সাড়ে ৪ লাখ টনের মতো চাল ইতোমধ্যে এসে গেছে। বাকি চাল আসার পথে রয়েছে। গমের পুরোটাই প্রায় একই সময়ে এসে গেছে দেশে। এখন খালাস চলছে চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রাম বন্দরে একসঙ্গে ৭টি চাল ও গমবাহী জাহাজের অবস্থান ছিল গত বুধ ও বৃহস্পতিবার। এসব জাহাজের মধ্যে ২টি এসেছে ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে ১৮ হাজার ১৭৫ টন চাল নিয়ে এবং ৫টি জাহাজ এসেছে আর্জেন্টিনা ও ইউক্রেন থেকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টন গম নিয়ে। নিকট অতীতে একই সময়ে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যবাহী এত জাহাজ বন্দরে আসেনি। একটি জাহাজ গম খালাস শেষে বৃহস্পতিবার বন্দর ত্যাগ করেছে। এখন ৬টি জাহাজ থেকে চাল-গম খালাসের কাজ চলছে।
সরকার সরাসরি চাল কিনছে ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে। মিয়ানমারের সঙ্গেও একটি চুক্তি হয়েছে। তবে মিয়ানমারের চালের কোনো চালান এখনও আসেনি। ভারত থেকে বিভিন্ন চুক্তির আওতায় গত কয়েক মাস ধরে চালবাহী জাহাজ আসছে। বৃহস্পতিবার ভারত থেকে চালবাহী আরও একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছেছে। একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকেও চালবাহী একটি জাহাজ বন্দর বহির্নোঙরে এসে পৌঁছে। গমবাহী ৫টি জাহাজ প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে। এর মধ্যে একটি জাহাজ খালাস শেষে গত বৃহস্পতিবার বন্দর ছেড়ে চলে গেলেও বর্তমানে আরও ৪টি জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে রয়েছে। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে করে খালাস কাজ চলছে। একসঙ্গে ৬টি খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ থেকে খালাস কাজ চলতে থাকায় এই লকডাউনের সময়ও ব্যস্ততা বেড়েছে খাদ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের। জাহাজ থেকে চাল ও গম দ্রুত খালাসের উদ্যোগ নিয়ে তা পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন সাইলো ও খাদ্যগুদামে। খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) এবং করোনাকালে কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির আওতায় আমদানিকৃত চাল বিতরণ করা হবে। গম বিতরণ হবে সেনা, পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনী এবং সরকারি আটা-ময়দার মিলগুলোয়।
খাদ্য অধিদফতরের চলাচল ও সংরক্ষণ বিভাগের উপনিয়ন্ত্রক সুনীল দত্ত সময়ের আলোকে জানান, ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে ( জিটুজি) ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তির আওতায় প্রথম চালান নিয়ে ‘এমভি বিএমসি কসমস’ নামে জাহাজটি বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছে। এতে ৭ হাজার ৭০০ টন আতপ চাল রয়েছে। এদিনই জাহাজ থেকে চালের নমুনা সংগ্রহ করে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ বিভাগ এবং শুল্ক বিভাগে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ভারত থেকে সিদ্ধ চাল নিয়ে ‘এমভি টি ভিসা’ নামে আরেকটি জাহাজও একই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে এসে পৌঁছে। এতে ১০ হাজার ৪৭৫ টন সিদ্ধ চাল রয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুটি জাহাজ থেকেই চাল খালাস কাজ আজ রোববার শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করছে খাদ্য বিভাগ। জিটুজির আওতায় ভাত থেকে চাল সরবরাহ করছে এনপিসিএফ নামে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান।
সরকার ওএমএস কার্যক্রম জোরদার করতে গত বছর করোনার লকডাউন শুরু হওয়ার পর বেসরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল কেনার চুক্তি করে। পাঁচটি চুক্তির প্রতিটিতে ৫০ হাজার টন করে চাল সরবরাহের কথা। এর মধ্যে এসেছে প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টনের মতো। আরও ৫৫ হাজার টন আসার পাইপলাইনে রয়েছে। এ বছর সরকারিভাবে জিটুজি পদ্ধতিতে ৫০ হাজার টন আতপ এবং ১ লাখ টন সিদ্ধ চাল কেনার দুটি পৃথক চুক্তি হয় ভারতের সঙ্গে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৬০০ টন আতপ চাল এসেছে গত সপ্তাহে। দ্বিতীয় চুক্তির আওতায় আসা ১০ হাজার ৪৭৫ টন সিদ্ধ চালবাহী জাহাজ থেকে এখন খালাস চলছে। তৃতীয় চুক্তি হয়েছে ৮০ হাজার টন চালের। সেই চুক্তির চাল এখনও আসেনি। ভিয়েতনামের সঙ্গে ৫০ হাজার টন আতপ চালের যে চুক্তি হয়েছে তার আওতায় প্রথম চালানে ৭ হাজার ৭০০ টন চাল নিয়ে আসা জাহাজ থেকেও এখন খালাস চলছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ১ লাখ টন চাল সরবরাহের চুক্তি হয়েছে সেখানে সামরিক অভ্যুত্থানের আগে। সেই চুক্তির চাল এখনও আসেনি। সর্বশেষ ভারতের সঙ্গে আরও একটি চুক্তি হয়েছে ১ লাখ টন চাল সরবরাহের। মোট ৭ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। বাকি চাল আমদানির পাইপলাইনে রয়েছে। ভারত এবং ভিয়েতনাম থেকে কেনা চালের দাম পড়েছে প্রতিটন ৩৯৭ থেকে ৪১৬ ডলারের মধ্যে।
আর্জেন্টিনা এবং ইউক্রেনের সঙ্গে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনার চুক্তি হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সেই চুক্তিগুলোর আওতায় পাঁচটি জাহাজে সব গম চলে এসেছে। বরং চুক্তির চেয়ে ১৫ হাজার টনের মতো বেশি গম এসেছে। ২ লাখ ৫০ হাজার টনের চুক্তি হলেও এসেছে ২ লাখ ৬৫ হাজার টন।
৫৩ হাজার ৮৯০ টন গম নিয়ে আসা ‘এমভি স্টার ডোরেডো’ গম খালাস শেষে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করেছে। এখন বন্দরের বহির্নোঙরে চারটি জাহাজ থেকে গম খালাস কাজ চলছে। এর মধ্যে ‘এমভি এনজিলি-এন’ জাহাজে ৫২ হাজার ৫০৯ টন, ‘এমভি জে ওয়াই প্রগ্রেস’ জাহাজে ৫৩ হাজার ৮১০ টন, ‘এমভি ইআর ব্রডার’ জাহাজে ৫২ হাজার ৫০০ টন এবং এমভি আটলান্টিক আইল্যান্ড জাহাজে ৫২ হাজার ৫০০ টন গম রয়েছে। সবকটি জাহাজের গম খালাসের কাজ এ সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট।