করোনার ধাক্কায় রপ্তানিতে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হলেও ধীরে ধীরে সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠে চিংড়িতে সুদিন ফিরে আসছে। চট্টগ্রামে এপ্রিলে যেখানে মাত্র ৬৯৮ দশমিক ৩৩ টন রপ্তানি হয়, নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬২১ দশমিক ১৭ টনে। প্রতি মাসেই বাড়ছে রপ্তানি। পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে ওঠায় রপ্তানিকারকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুরু করেছেন।
চট্টগ্রাম মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। এটি এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জন্য আনন্দের খবর। চিংড়ি শিল্পকে এগিয়ে নিতে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। তিনি জানান, গত নভেম্বরে দুই হাজার ৬২১ দশমিক ১৭ টন, অক্টোবরে দুই হাজার ১৬২ দশমিক ১২ টন, সেপ্টেম্বরে দুই হাজার ১৬৪ দশমিক ১৬৫ টন, আগস্টে এক হাজার ৫৮০ দশমিক ৪৯ টন, জুলাইয়ে এক হাজার ৪২১ দশমিক ৭৪৩ টন এবং জুনে এক হাজার ৬২৯ দশমিক ৬২০ টন মৎস্য রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সভাপতি আশরাফ হোসেন মাসুদ বলেন, করোনার শুরুতে একের পর এক মৎস্য রপ্তানি অর্ডার বাতিল হওয়ায় মার্চ থেকে মে পর্যন্ত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি করতে পারিনি। এতে আমরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে জুন থেকে ধীরে ধীরে অর্ডার বাড়তে থাকে। এখন যে পরিমাণ রপ্তানি করছি তার ৯০ শতাংশের বেশি চিংড়ি। মূলত লোনা পানির বাগদা, মিঠা পানির গলদা ও সামুদ্রিক অন্যান্য জাতের চিংড়ি রপ্তানি করছি আমরা।
চট্টগ্রামের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস জানায়, ২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসে চট্টগ্রাম থেকে চিংড়িসহ মৎস্য রপ্তানি হয়েছে ১৯ হাজার ১১৬ দশমিক ৫৬৪ টন। একই সময়ে চলতি ২০২০ সালে রপ্তানি হয়েছে ১৮ হাজার ৮৯৩ দশমিক ৭৮ টন। করোনা শুরুর পর এপ্রিল-মে মাসে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিতে ব্যাপক ধস নামে। স্বাভাবিকের তুলনায় ওই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ কমে গিয়েছিল এক-পঞ্চমাংশ। যেখানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম থেকে মৎস্য রপ্তানি হয় তিন হাজার ২৫৮ দশমিক ৯২ টন। এপ্রিলে তা কমে হয়েছে মাত্র ৬৯৮ দশমিক ৩৩ টন। একই অবস্থা ছিল মে মাসেও। ওই মাসে মাত্র ৯৯৫ দশমিক ৬২ টন মৎস্য রপ্তানি হয়। রপ্তানি কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন মৎস্য রপ্তানিকারক, আড়তদার ও হ্যাচারি মালিকরা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হচ্ছে হিমায়িত চিংড়ি। দেশে সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয় কক্সবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোর জেলায়। বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে অন্যতম সম্ভাবনাময় এ খাত করোনায় হুমকির মুখে পড়ে। ওই সময়ে অনেক দেশ রপ্তানি চুক্তি বাতিল করে। হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, চিংড়ির প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। সেখানকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর মালিকরা এসব চিংড়ি আমদানি করে থাকেন। কিন্তু করোনার কারণে এপ্রিল-মে মাসে বন্ধ থাকে হোটেল-রেস্তোরাঁ। তাই আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বহু ক্রয়াদেশ বাতিল করেন। জুন-জুলাইয়ের দিকে কিছু রেস্তোরাঁ খোলা শুরু করলে রপ্তানি অর্ডার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
বিগত বছরগুলোতে এ অঞ্চলের সাদাসোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ি গ্রিস, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, বেলজিয়াম, জাপান, ফ্রান্স, তাইওয়ান, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, মরিশাস, চীন, ইতালি, ডেনমার্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিতে সাফল্য এলেও করোনার কারণে শিপমেন্ট না হওয়ায় চিংড়ি রপ্তানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন।