ডেস্ক নিউজ
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের আওতাধীন কুমিল্লা ইকোনমিক জোনকে চূড়ান্ত লাইসেন্স প্রদান করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে এ লাইসেন্স প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ও মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।
এটি বেজা কর্তৃক প্রদত্ত ১২তম বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল লাইসেন্স। বেজা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক এবং সেবা প্রদানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে প্রায় ২৫০ একর এলাকা জুড়ে কুমিল্লা ইকোনমিক জোনের অবস্থান যা পরবর্তীতে ৩৫০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোনের উদ্যোক্তা মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রস্তাবিত জোনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জোন হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কারখানা ও প্রশাসনিক ভবন, পণ্যাগার, লজিস্টিক এলাকা, পানি ও বর্জ্য শোধনাগার, সড়ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও সবুজায়ন, স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরী করা হবে। পরিবেশের উপর যাতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পরে তার জন্য পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
উক্ত জোনটিতে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে কুমিল্লা ইকোনমিক জোন লিমিটেড। জোনটির সফল বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়। বেজার চূড়ান্ত লাইসেন্স প্রাপ্ত বিভিন্ন বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এসব অঞ্চলে মোট ২৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আছে এবং ২৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। এসকল অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং ৩৫ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে সিমেন্ট, ভোজ্য তেল, ব্যাগ, পেপার, টিস্যু, খেলনা, বেভারেজ এবং খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। এছাড়া আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোনে প্রস্তুত করা হচ্ছে জাপানের প্রসিদ্ধ হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বেজার এই মাইলফলক অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি আধুনিক, দ্রুত এবং মানসম্মত সেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বেজার কার্যক্রমের ফলে করোনাকালেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের কাছে বিস্ময় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সংস্থাটি সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সুসমন্বয়ের মাধ্যমে শিল্পায়নের এ ধারা বজায় রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধ পরিকর। বেজার তার কাজের মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন মেঘনা গ্রুপকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন ঢাকার নিকটবর্তী স্থানে হওয়ায় কুমিল্লা ইকোনমিক জোন দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাবে বলে বেজা মনে করে। তিনি বলেন, কুমিল্লা ইকোনমিক জোনে কমপক্ষে ৫০% জমি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ফলে এই ইকোনমিক জোন বিদেশী বিনিয়োগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করেন সরকারের সকল আইন ও নীতি প্রতিপালন করে তারা যেন পরিকল্পিত শিল্প স্থাপন করেন। শুধুমাত্র কর অবকাশ বা ইনসেন্টিভ প্যাকেজের কথা চিন্তা না করে বৃহত্তর স্বার্থে সকল বিনিয়োগের জন্য সুযোগ সৃষ্টির প্রতি তিনি গুরুত্ব দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বেজা এবং মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে বেজা ও তার আওতাধীন বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ ভূমিকা রাখছে এবং এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে কুমিল্লা ইকোনমিক জোনের কর্ণধার জনাব মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে এবং রপ্তানীযোগ্য পণ্য প্রস্তুতিতে মেঘনা গ্রুপ সুনামের সাথে কাজ করে এসেছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠান দেশ এবং দেশের বাইরের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আগ্রহী। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।