নিউজ ডেস্ক:
রাজনীতিবিদ রুহুল কবির রিজভী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। তিনিই বিএনপির একমাত্র নেতা যিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নিজের বাসা ছেড়ে রাজধানীর নয়া পল্টনে অবস্থিত বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে টানা একবছর ধরে অবস্থান করছেন। এখানে থেকেই মাঝে মধ্যে দলের কয়েকজনকে নিয়ে ঝটিকা মিছিলে বের হয়ে আবার ফিরে আসতেন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সম্প্রতি বয়সসীমা তুলে দিয়ে ধারাবাহিক কমিটির দাবি নিয়ে দফায় দফায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা এবং কার্যালয় ফটকে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচিতে রিজভী। নিজে যেতে পারছেন না কোথাও এবং তার কাছে আসতেও পারছে না কেউ। আহত হয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাদের হাতে। ছোট একটি রুমে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অবস্থা এমন যে, তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য আসা ডাক্তাররাও কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছে না। একজন ডাক্তার নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল আসতে চাইলেও তাকে গাড়ি থেকেই নামতে দেয়নি ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধরা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখায় ভেতরে খুবই অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। তীব্র গরমে দিনানিপাত করছেন রিজভী।
নয়া পল্টনের কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় দফতরের একটি ছোট কক্ষে বিছানায় শুয়েই দিন কাটছে রিজভীর। এক পর্যায়ে কয়েকজন ছাত্রদল নেতার সহযোগিতায় বিএনপি কার্যালয়ে একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রবেশ করতে দিলে রিজভীকে স্যালাইন দেয়া হয়। অবরুদ্ধ অবস্থায় রিজভী জানান, ‘আমার কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে। আমি অসুস্থ। মুখে খেতে পারছি না। বমি হচ্ছে। এখন স্যালাইনে সবকিছু হচ্ছে’। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা আমাকে দেখতে আসতে পারছেন না। আমি খুব কষ্টে আছি। কারণ আমার ছোট ভাইদের কারণে অফিসে তারা (ডাক্তাররা) ঢুকতে পারছেন না। এখানে থেকে টেলিফোনে ডাক্তারের সাথে কথা বলে সবকিছু করা হচ্ছে’। আক্ষেপের সুরে রিজভী বলেন, ‘এটা সবচাইতে কষ্টের যে আমার দলের ছেলেদের কাছে আজ আমি বন্ধি’।
গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে দ্বিতীয় দফায় রুহুল কবির রিজভী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। এখানে তিনি দুই বেলা খাবার রান্না করে খান। রাতে ঘুমও সেই একেবারে ছোট একটি কক্ষে। ঈদও করেছেন রিজভী এই অফিসেই। তার স্ত্রী আনজুমান আরা লাইলি ঈদের দিন খাবার রান্না করে স্বামীর জন্য নিয়ে আসেন।
কেনো দলীয় কার্যালয়ে তাকে থাকতে হয়- এ রকম প্রশ্নের খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশেই রিজভীকে দলীয় কার্যালয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে এক-দুই দিন স্ত্রী শিক্ষিকা আনজুমান আরা লাইলি খাবার রান্না করে নিয়ে আসেন অথবা বাসার কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দেন। এই এক বছরের মধ্যে অনেক সময় প্রয়োজনে দলের বক্তব্য দিতে রিজভীকেই সাংবাদিক সম্মেলনে দেখা গেছে। সেটা সকালেই হোক অথবা রাতে হোক। দলের অনেক প্রেস রিলিজটি রিজভীর স্বাক্ষরে যায়।