ডেস্ক নিউজ
জনশক্তি রপ্তানিতে বইছে সুবাতাস। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই প্রায় ৭ লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে। সুযোগ তৈরি হয়েছে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙার। ইতোমধ্যেই সাম্প্রতিক বছরগুলোর চেয়ে বেশি কর্মী গিয়েছে বিদেশে। এখন এক বছরে ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ডের আশা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানির বর্তমান ধারা বজায় রেখে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণ বেগবান করতে পারলে সহজেই নতুন মাইলফলক অর্জন সম্ভব।
জনশক্তি রপ্তানিকারক ও অর্থনীতির গবেষকরা বলছেন, মহামারির ধাক্কা সামলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো এই দেশগুলোও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চাঙা হচ্ছে এসব দেশের অর্থনীতি। সব মিলিয়ে তাদের কাজের লোকের চাহিদা বেড়েছে। তাই বাড়ছে জনশক্তি রপ্তানি। এ কারণে আগামী দিনগুলোতে দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণও বাড়বে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোর তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ৬ লাখ ৯১ হাজার ১৭ জনকে বিদেশে কাজের জন্য পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে মাসে ১ লাখের বেশি কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে চারবার। জানুয়ারিতে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ জনের, ফেব্রুয়ারিতে ৯২ হাজার ৫৯৬ জনের, মার্চে ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৬ জনের, এপ্রিলে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৭৫ জন, মে মাসে ৭৭ হাজার ৪২১ জন, জুন মাসে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৩৯ জন এবং জুলাই মাসে হয়েছে ৭৫ হাজার ৪৯৯ জনের। অবশ্য মাসে সর্বাধিক কর্মী পাঠানোর রেকর্ড হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। সেসময় এক মাসেই ১ লাখ ৩১ হাজার ৩১৬ জন কাজ নিয়ে বিভিন্ন দেশে গেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে এত বেশি জনশক্তি রপ্তানি হয়নি।
বিএমইটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষন করে দেখা যায়, গত সাত মাসে বিশাল সংখ্যক কর্মী বিদেশে গেলেও তারা মূলত গিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ- সৌদি আরব, ওমান ও আরব আমিরাতে। মোট ৬ লাখ ৯১ হাজার জনের মধ্যে ৫ লাখ ৯৩ হাজার জনই গেছেন এই তিন দেশে। শুধু সৌদি আরবেই গেছেন ৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ জন। এরপর ওমানে গেছে ৯৭ হাজার ৭৫০ জন এবং আরব আমিরাতে ৭০ হাজার ২০৩ জন। এমন সংখ্যক কর্মী আর কোনো দেশে যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে গিয়েছে ১২ হাজার ৩৪৪ জন, জর্ডানে গিয়েছে ৯ হাজার ৫২৪ জন ও কুয়েতে ৮ হাজার ৬০৭ জন। এই অঞ্চলের দেশ বাহরাইনে মাত্র দুজন ও লেবাননে ২৯৪ জন কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সিঙ্গাপুরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ৩৪ হাজার ৪২১ জন কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছে ২ হাজার ৭০১ জন, মরিশাসে গিয়েছে ২ হাজার ৬৩৬ জন, ইতালিতে ৯০৬ জন, ব্রুনাইতে ৪০৮ জন, জাপানে ২৬২ জন, যুক্তরাজ্যে ২১৪ জন, সুদানে ১১২ জন, লিবিয়ায় ১১ জন ও ইরাকে ছয়জনকে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এদিকে নারী জনশক্তি রপ্তানিও আগের বছরগুলোর চেয়ে বেড়েছে। ২০২১ সালে ৮০ হাজার ১৪৩ জন নারী কর্মী কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই বিদেশে কাজের জন্য গেছেন ৬৭ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে গেছেন ১০ হাজার ২৯০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১০ হাজার ৬১২ জন, মার্চে ১১ হাজার ২১১ জন, এপ্রিলে ১১ হাজার ৪৯৭ জন, মে মাসে ৬ হাজার ৭৫৩ জন, জুনে ১০ হাজার ৪৮৯ জন ও জুলাইয়ে ৬ হাজার ২৯৫ জন। নারী কর্মীদের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে গেছেন ৪২ হাজার ৬৪৭ জন। এর পরে ওমানে গেছেন ১১ হাজার ৭৩৯ জন, জর্ডানে ৯ হাজার ২৫৮ জন, কাতারে গেছেন ১ হাজার ২৫০ জন ও আরব আমিরাতে গেছেন ১ হাজার ৬৩ জন নারী কর্মী। এ ছাড়া মরিশাস, লেবানন, কুয়েতে কয়েক শ নারী কর্মী গেছেন বাংলাদেশ থেকে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরে আগের সব রেকর্ড ভাঙার আশা করা হচ্ছে। কারণ গত সাত মাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছিল মাত্র ১২৯ জন। এখন আগস্ট মাস থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে যাওয়ায় প্রতি মাসে যদি ২০-২৫ হাজার কর্মীও পাঠানো যায়, তাহলে চলতি বছরে বাকি ৫ মাসে কমপক্ষে ৪ লাখ পাঠানো সম্ভব হবে। এতেও গত ২০১৭ সালে এক বছরে সর্বোচ্চ ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী পাঠানোর রেকর্ড পেরিয়ে যাওয়া যাবে।
জানা যায়, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৪৩ লাখ বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান। ২০১৯ সালে মহামারি করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে ৭ লাখ ১৫৯ জন কর্মী কাজ নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন। করোনার ধাক্কায় ২০২০ সালে তা ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জনে নেমে আসে।