ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ভুক্তভোগী হিসেবে নারীরা এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বর্ধিত অংশীদারিত্বের দাবিদার এবং তাদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ করে স্থিতিস্থাপকতা উন্নয়নে আরও সাহসী পদক্ষেপের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট তাদের দুর্বলতা মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মহিলাদের জন্য অবস্থান তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।’
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডে কপ-২৬-এর সাইডলাইনে নারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। বাসস।
এ ছাড়া তার সরকারের দেওয়া অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্কটল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী সেখানে তার বাসস্থান থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সহনশীল কমিউনিটি গড়ে তুলতে বৈশ্বিক সংহতির জন্য এই কপ-২৬ সম্মেলনে সাহসী ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে নারী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়েই সমানভাবে অংশ নিতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বেশ কিছু সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং মেয়ে।’
তিনি বলেন, মানবসমাজে বিদ্যমান কাঠামোগত বৈষম্য, অন্তর্নিহিত সামাজিক রীতিনীতি নারীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করছে।
সাধারণত বিশ্বজুড়ে নারীদের সম্পদের সমান সুযোগ নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সমাজে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই এবং তারা প্রায়ই স্বল্প বেতনের এবং অবৈতনিক চাকরি ও কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এসব কারণে নারীদের ওপর পুরুষদের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বেশি পড়ে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় নারীদের চরম বিপন্নতা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার টেকসই উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।
পরে প্যানেল প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করেছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন (এনএপিএ) অভিযোজন সমাধানের অংশ হিসেবে ব্যাপকভাবে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত নীতি, কৌশল এবং পদক্ষেপে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে তার সরকার ন্যাশনাল ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে।
তিনি সঙ্গে বলেন, তার সরকার জেন্ডার রেসপন্সিভ বাজেটিং (জিআরবি) চালু করেছে, এতে সব নীতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মূলধারায় নারীর উন্নয়নে নারীদের জন্য প্রায় ৩০ শতাংশ বরাদ্দ করেছে।
বৈজ্ঞানিক সত্য হচ্ছে, পুরুষের চেয়ে নারী সহনশীল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কঠিন পরিস্থিতিতে নারীরাই প্রথমে তাদের পরিবার-পরিজনের যত্ন নিতে ঘুরে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, তার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়ে নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে।
জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রোগ্রামে ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে, এদের ৫০ শতাংশ নারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচি দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা কমাতে সাফল্য অর্জন করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সম্পদ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি উদ্যোগে নারীদের চালকের ভূমিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জেন্ডার সংবেদনশীল অভিযোজন এবং প্রশমন ব্যবস্থার জন্য অর্থায়ন হবে মূল বিষয়।’
শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ‘নারীদের চাহিদা ও অগ্রাধিকার দিতে অর্থের সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী নারীদের কণ্ঠস্বর সোচ্চার করার’ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আমরা ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্লান’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এই পরিকল্পনা নারীদের জলবায়ু ঝুঁকি থেকে জলবায়ু সহনশীলতা এবং জলবায়ু সহনশীলতা থেকে জলবায়ু সমৃদ্ধির মূলধারায় পৌঁছে দেবে।’
বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সুযোগ নিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান : এদিকে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সুযোগ নিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতিবন্ধকতাগুলো (আরও যদি থাকে) খুঁজে বের করব এবং আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, সেগুলোর সমাধান করার মাধ্যমে বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও সুবিধাজনক করব।’
আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই গণমুখী উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সবসময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা যথাযথ চ্যানেল ব্যবহার করে বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য তার সরকার প্রবর্তিত ২ শতাংশ প্রণোদনার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুবিধার্থে একটি পৃথক ব্যাংকও প্রতিষ্ঠা করেছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীরা কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে তিনি জানতেন না যে তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, লন্ডনে একটি রোড শো হবে, যেখানে আমি বাংলাদেশ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষকে (বিডা) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলব। সরকারপ্রধান আরও বলেন, বিনিয়োগের সুবিধার্থে সব বাধা দূর করতে তিনি ইতোমধ্যে বিডাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য তার সরকার বিশেষ ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে। তবে, তিনি প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশে প্রচলিত আইন মেনে চলার অনুরোধ করেন, কারণ, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা এটি মেনে চলবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বিনিয়োগ বন্ড ও প্রিমিয়াম বন্ড রয়েছে যেখানে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে এবং সেখানে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
স্কটল্যান্ডে বিএনপির বিক্ষোভের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, কেন তারা এটা করছে!
তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন আমার দোষ কী? বাংলাদেশের উন্নয়ন করেছি, দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।’
বাংলাদেশের আর বিদেশিদের কাছে ভিক্ষা করার দরকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএনপি তাদের শাসনামলের মতো দেশকে আবারও এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ফেলতে চায়। তিনি বলেন, তাদের মতো চোরেরা (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ আবারও অন্ধকারের যুগে নিমজ্জিত হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট কখনও দেশের উন্নয়ন চায় না, এমনকি তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাও চায়নি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তার সরকার ঢাকা-নিউইয়র্ক এবং ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট পুনরায় চালু করার জন্য আলোচনা করছে।