ডেস্ক নিউজ
জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতিসংঘের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে যুক্তরাজ্যে যাত্রাবিরতি করবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর রবিবার প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। কভিড-১৯ বাস্তবতায় এবারের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল খুব ছোট আকারে গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর এবারের ভাষণে অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি বিশে^ বড় পরিসরে করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে পেটেন্টসহ মেধাস্বত্ব উন্মুক্তকরণের জোরালো দাবি জানাবেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
ড. মোমেন বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। অধিবেশনের বড় অংশ জুড়ে থাকবে কভিড-১৯ ও পরবর্তী টেকসই পুনরুদ্ধার ও পুনর্নির্মাণ। কভিড-১৯ মহামারী থেকে মুক্তিলাভের জন্য বিশে^র ‘ভ্যাকসিন বৈষম্য’ দূরীকরণের বিষয়টি এবারের অধিবেশনে বিশেষভাবে আলোচিত হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে। এবারের সাধারণ অধিবেশনে ‘ইউএন ফুড সিস্টেম সামিট’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সভা হবে। এ সভার মূল লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক খাদ্যব্যবস্থার আন্তসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ত্বরান্বিত করা। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য-বিভেদ ইত্যাদি আশঙ্কজনকভাবে বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় আসবে। আলোচনায় আসবে বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ ও নিরস্ত্রীকরণ ইস্যু। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্ব ও প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবারের জাতিসংঘের অগ্রাধিকার ইস্যুগুলোর প্রতিটি বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এসব ইস্যুও সব ইভেন্টে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। সিভিএফ চেয়ার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন দেশ হিসেবে এটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একই দিনে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দফতর চত্বরে বৃক্ষ রোপণ করবেন। ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আয়োজিত ‘হোয়াইট হাউস গ্লোবাল কভিড-১৯ সামিট’-এ বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন বাংলাদেশের আয়োজনে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্ট হবে। বাংলাদেশ ছাড়াও গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ওআইসি অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনই যে বাংলাদেশের কাছে অগ্রাধিকার তা আমরা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর ইউএন ফুড সিস্টেম সামিটে অংশ নেবেন। একই দিনে ইউএন কমন এজেন্ডা শীর্ষক সাইড ইভেন্টে তিনি বক্তব্য দেবেন। পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেবেন। ভাষণে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্বশান্তি, নিরাপদ অভিবাসন, করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্যতাভিত্তিক বণ্টন, বৃহৎ পরিসরে করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে পেটেন্টসহ মেধাস্বত্ব উন্মুক্তকরণ, ফিলিস্তিনি ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ উঠে আসবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ, ভিয়েতনামের গুয়েন জুয়ান ফুক, বারবাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়ার অমর মোত্তেলি, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মাইকেলসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন। কভিড মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।