ডেস্ক নিউজ
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলা বন্ধে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) বিশেষ অধিবেশনে উত্থাপিত প্রস্তাবে বাংলাদেশ পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই প্রস্তাবে ইউক্রেনের যুদ্ধপীড়িত মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেয়া এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে ইউক্রেনে মানবিক সঙ্কট সৃষ্টির জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করা হয়েছে।
এর আগে ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিল রাশিয়া। পাশাপাশি দেশটির ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের সাথে আর্থিক লেনদেনেরও বিকল্প পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছে বলেও জানানো হয়। গতকাল রাজধানীর রাশিয়ান ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দার মান্টিটাস্কি এসব কথা জানান।
গতকাল ইউএনজিএতে ইউক্রেনের উত্থাপিত প্রস্তাবটির পক্ষে ১৪০ ভোট এবং বিপক্ষে পাঁচ ভোট পড়েছে। ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ ৩৮টি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল। বেলারুস, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া, সিরিয়া ও রাশিয়া প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
গত ২ মার্চ ইউএনজিএর প্রথম বিশেষ অধিবেশনে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলা বন্ধের প্রস্তাবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ৩৫টি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল। এ কারণে বাংলাদেশকে পশ্চিমা দেশসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের বক্তব্য ছিল, প্রস্তাবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেয়ে বরং রাশিয়াকে দোষারোপ করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। তাই বাংলাদেশ প্রস্তাবে পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো দিকেই ভোট দেয়নি।
গতকাল একই ইস্যুতে ইউএনজিএতে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোটাভুটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবের ভাষায় বাংলাদেশের আপত্তি তোলেনি। প্রস্তাবে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। বিশেষ করে বেসামরিক নাগরিক ও স্থাপনার ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক অভিযানে এক হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির প্রায় অর্ধেক শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়া থেকে বিরত রাখতে এবং দেশটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কয়েকটি অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতি আদায়ে রাশিয়া এক মাস ধরে স্থল, নৌ ও আকাশপথে ইউক্রেনের ওপর সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩০টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ন্যাটো ইউক্রেন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় প্রয়োজনীয় সমর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইউএনজিএর প্রস্তাব আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও এর নৈতিক প্রভাব রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ ফোরাম। কিন্তু ভেটো ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় ইউক্রেন সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদে পাস হতে দিচ্ছে না।
বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার লেনদেনের বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে
এদিকে গতকাল ঢাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন রাষ্ট্রদূত মান্টিটাস্কি। এগুলো হলোÑ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমি, যুদ্ধ এড়ানোর জন্য রাশিয়ার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের ফলাফল, ইউক্রেনে পশ্চিমাদের সামরিকীকরণ ও নাৎসিকরণ, যুদ্ধের অর্থনৈতিক পরিণতি এবং নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশ ও রাশিয়া সম্পর্ক।
ইউক্রেনে হামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার ওপর নানামুখী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেন পদ্ধতি সুইফট থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। এর কারণে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত মান্টিটাস্কি বলেন, গত সপ্তাহে মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাস বার্টার বাণিজ্য (পণ্যের বিনিময়ে পণ্য) বিবেচনায় নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। আমি এটুকু বলতে পারি, দুই দেশ ব্যবসা ও লেনদেন অব্যাহত রাখার স্বার্থে বার্টার, এক দেশের সাথে অন্য দেশের সরাসরি মুদ্রাবিনিময় এবং তৃতীয় দেশের ব্যাংক ব্যবহারের মতো বিকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যথাসময়ে বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এসব বিষয় আমরা বুঝতে পারি। এখন পর্যন্ত নির্ধারিত সময় ধরেই কাজ এগোচ্ছে। পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ব্যবসাবাণিজ্য কমানো নয়; বরং বাড়াতে আগ্রহী রাশিয়া।
রাশিয়া থেকে কেনা গম ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মান্টিটাস্কি বলেন, একটা বিষয় স্পষ্ট করেই বলছি, সরবরাহের বিষয়ে রাশিয়ার বাধ্যবাধকতা পূরণ করা হবে। বাড়তি চাহিদা নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী ও কিছু গণমাধ্যম জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়ায় এখানে পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে।