ডেস্ক নিউজ
জাহাজ নির্মাণ ও রফতানিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিগত কয়েক বছরে দেশের শিপইয়ার্ডগুলো ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে ৪০টি জাহাজ রফতানি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের এনজিয়ান শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ৬১০০ ডিডব্লিউটির একটি জাহাজ রফতানি করেছে আনন্দ শিপইয়ার্ড এ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড। বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জাহাজ এটিই। শুধু আনন্দ শিপইয়ার্ড নয়, জাহাজ শিল্পে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন দেশের অন্য উদ্যোক্তারাও। জাহাজ নির্মাণে অনুকূল পরিবেশ থাকায় এ খাতে নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আমদানিকারকরা। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ইরান ও ভারতের আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে জাহাজ আমদানি করতে চাইছেন।
জানা গেছে, সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জোর দিচ্ছে বিশ্বের উপকূলীয় দেশগুলো। সমুদ্র থেকে মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ, সামুদ্রিক নবায়নযোগ্য শক্তি, সামুদ্রিক পর্যটন, সমুদ্র নিরাপত্তা ও গবেষণা ঘিরে বাড়ছে এসব কর্মকা-। সমুদ্র অর্থনীতির এসব কর্মকা-ের জন্য দরকার উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত ছোট-বড় জাহাজ। এর মধ্যে জাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে ২৫-৩০ শতাংশ। বিশ্ববাজারে জাহাজের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। যার সুফল বাংলাদেশের রফতানিকারকরাও পাচ্ছেন। প্রতিদিনই অর্ডার পাচ্ছেন তারা। এফএমসি ডকইয়ার্ড, ওয়েস্টার্ন মেরিন, আনন্দ শিপইয়ার্ডসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রচুর কার্যাদেশ পাচ্ছে। দুর্দিন কেটে গিয়ে জাহাজ রফতানিতে আবার সুবাতাস বইতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রফতানিকারকরা। সরকারও এ খাতের রফতানি বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। রফতানিকারকদের নগদ সহায়তা, কর ছাড়সহ নানা প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ব্যাংকগুলোও মোটা অঙ্কের অর্থায়ন করেছে এই খাতে। দেরিতে হলেও একটি নীতিমালা করা হয়েছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে দুই হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে জাহাজ রফতানি থেকে বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার আয় হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে। এক যুগ আগে ২০০৭ সালে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ রফতানির মধ্য দিয়ে জাহাজ রফতানি খাতে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
জার্মানিতে জাহাজ রফতানির ফলে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন একটা বার্তা যায় যে দেশটি বিশেষায়িত এই শিল্পে দক্ষতা অর্জন করেছে। এতে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়। তবে ২০০৮ সালে শুরু হওয়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ২০১০ সালে ইউরো জোনের মন্দার কারণে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি। সমুদ্রগামী জাহাজের ৭০ ভাগের মালিকানা ইউরোপের দেশগুলোর। ওই সময়ে ইউরোপের ব্যাংকগুলো জাহাজ কেনায় অর্থায়ন বন্ধ রাখে। জাহাজ ভাড়াও ৭৫ শতাংশ কমে যায়।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী, জাহাজ নির্মাণ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন, কোরিয়া ও জাপান। বিশ্বের মোট জাহাজ নির্মাণের ৯০.৫ শতাংশ হয় এই তিনটি দেশে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজ রফতানি থেকে বাংলাদেশ ১ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় করেছিল। বিশ্ববাজারে সম্ভাবনা থাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার ধরা হয়, কিন্তু এক টাকার জাহাজও রফতানি করতে পারেননি রফতানিকারকরা। শুধু তা-ই নয়, গত বছরের মার্চে মহামারী শুরুর পর এই দেড় বছরে কোন রফতানি হয়নি। সে কারণে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় মাত্র ২ হাজার ডলার। মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নামমাত্র এই লক্ষ্য ধরে সরকার। তারপরও অর্থবছর শেষে এ খাত থেকে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। তবে ওই সময় প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন এ খাতের রফতানিকারকরা। লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে পথে বসার উপক্রম হয়েছিল তাদের। কিন্তু এরপর আবার ঘুরে দাঁড়ায় জাহাজ রফতানি।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় অন্যান্য পণ্যের মতো জাহাজের চাহিদাও ব্যাপকভাবে বাড়তে শুরু করে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প এক সম্ভাবনাময় রফতানি খাত। অত্যাধুনিক জাহাজ নির্মাণে আমাদের দক্ষতা রয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতে এ শিল্প তৈরি পোশাক শিল্পের কাছাকাছি রফতানি আয় অর্জন করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘সমুদ্রসীমা জয় করলেও আমরা সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে পারিনি। এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। সম্ভাবনাময় এ খাকে এগিয়ে নেয়া জরুরী। সরকার এটিকে গুরুত্ব দিয়ে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, মাতারবাড়ী, মোংলা, পায়রাসহ সব বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।’
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববাজারে ছোট ও মাঝারি নৌযানের জন্য বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। যদিও এ খাত প্রধানত অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণ করে, তবে গত এক দশকে রফতানি সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ জ্বালানি, ৭০ শতাংশ কার্গো এবং ৩৫ শতাংশ যাত্রী নৌপথে পরিবাহিত হয়, যা দেশের অভ্যন্তরে জাহাজের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি করেছে। দেশে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০০ শিপইয়ার্ড রয়েছে; যদিও এর মধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান রফতানিযোগ্য জলযান তৈরি করে। এ খাতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ জড়িত। অভ্যন্তরীণ বাজার ১০-১৫ শতাংশ হারে বাড়লেও ৫-৬ শতাংশ হারে বাড়ছে রফতানি বাজার।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মতে, বর্তমানে ১০০টিরও বেশি জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এবং নানা আকারের ১২০টিরও বেশি নিবন্ধিত শিপইয়ার্ড রয়েছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে ছোট-বড় মিলে প্রায় তিন শতাধিক শিপইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি রফতানিযোগ্য জাহাজ তৈরি করে; এ খাতে প্রায় তিন লাখ মানুষ জড়িত। রফতানি আদেশের জন্য বর্তমানে জাহাজের বার্ষিক নির্মাণ সক্ষমতা কমবেশি ২০ ধরা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য স্থানীয়ভাবে নির্মিত নৌযানের মধ্যে রয়েছে এমপিভি, কন্টেনার, বাল্কার, ট্যাঙ্কার, ড্রেজার, টাগ এবং যাত্রীবাহী ফেরি। আকারে এসব ১-২০ হাজার ডিডব্লিউটির মধ্যে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এনজিয়ান শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ৬১০০ ডিডব্লিউটির একটি জাহাজ রফতানি করেছে আনন্দ শিপইয়ার্ড এ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড। বাংলাদেশ থেকে রফতানিকৃত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জাহাজ এটিই। ২০১০ সাল থেকে টানা ১০ বছরের মন্দা কাটিয়ে এটি আনন্দ শিপইয়ার্ডের দ্বিতীয় জাহাজ রফতানি। আনন্দ শিপইয়ার্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সাল থেকেই বৈশ্বিক বাজারে আবারও অবস্থান ফেরাতে শুরু করেছে বাংলাদেশের জাহাজ শিল্প। দীর্ঘদিন পর ২০২০ সালে করোনার শুরুতে ৫৫০০ ডিডব্লিউটির আরেকটি জাহাজ রফতানি হয়। এখন রফতানির অপেক্ষায় আরও তিনটি জাহাজ। তারা বলছেন, ইউরোপের বাজারে পরিবেশবান্ধব জাহাজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজ রফতানিতে নতুন নতুন অর্ডার আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশও এখন পরিবেশবান্ধব জাহাজ নির্মাণ করছে। জানতে চাইলে আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহহেল বারী বলেন, ‘২০০৮ সালে ডেনমার্কে অত্যাধুনিক কন্টেনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রথম জাহাজ রফতানি শুরু করি আমরা। এরপর মাত্র দুই বছরে বিভিন্ন দেশে ১১টি জাহাজ রফতানি হয়। এখন আবার রফতানি বাজার উন্মুক্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আনন্দ শিপইয়ার্ড ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সোনারগাঁওয়ের মেঘনাঘাটে আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ করছে। ইয়ার্ডের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার টন। দেশী-বিদেশী ক্রেতাদের কাছে ৩৫৬টি জলযান নির্মাণ করে সরবরাহ করেছি। রফতানি বাজারে আরও ভাল করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’
শুধু আনন্দ শিপইয়ার্ড নয়, জাহাজ শিল্পে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন দেশের অন্য উদ্যোক্তারাও। জাহাজ নির্মাণে অনুকূল পরিবেশ থাকায় এ খাতে নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের। চট্টগ্রাম-ভিত্তিক জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড সুদান সরকারের কাছ থেকে এএসডি টাগবোট নির্মাণের জন্য একটি নতুন কার্যাদেশ পেয়েছে, এই অত্যাধুনিক নৌযানের রফতানি মূল্য ১৩ মিলিয়ন ডলার। বারী এ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশের সভাপতিও। তিনি বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প দেশকে বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা যোগান দিয়ে থাকে। এই অংক ২০৪১ সালে ১০০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে।
চলতি বছর ১.৫ বিলিয়ন ডলার অর্ডার পাবে বাংলাদেশ ॥ চীনের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন চাইনিজ এ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ন্যাশনাল শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রির (সিএএনএসআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছরের মন্দার পর বৈশ্বিক জাহাজ নির্মাণের ব্যবসা বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ২০২১ সালেই বিশ্বের জাহাজ রফতানি প্রতিষ্ঠানগুলো ৯০ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার পাবে। ইতোমধ্যে ২৮.৩৯ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার ইতোমধ্যে পেয়েছেন চীনের রফতানিকারকরা। বাংলাদেশ সরকারও এই সুফল পাবে। ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১.৫ বিলিয়ন ডলার অর্ডার পাবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান বিশ্বব্যাপী জাহাজ নির্মাণের চাহিদার কমপক্ষে ১ শতাংশ জোগান দেয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। বৈশ্বিক বাজারের চাহিদার একটি অংশ দখল করার জন্য বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাতাদের রফতানির জন্য একটি বড় সুযোগের দ্বার খুলে দেয়া হয়েছে।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে স্বল্পসুদে ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল ॥ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে দুই হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ স্কিমের সুদহার হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১২ বছর (৩+৯ বছর) মেয়াদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে ৯ বছরের মধ্যে মাসিক বা ত্রৈমাসিক সমকিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে ঋণ দিতে বেশকিছু বিধিনিষেধজুড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি (বিআরপিডি) বিভাগ গত মে মাসে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, জাহাজ শিল্পের টেকসই উন্নয়ন, রফতানি আয় ও কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং আমদানি নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে এনে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালার আলোকে অপেক্ষাকৃত স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক দুই হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে। দুই হাজার কোটি টাকার এ স্কিম পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক ও বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক এ পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পুনঃঅর্থায়ন নিতে আগ্রহী ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশনের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
বাংলাদেশী জাহাজ আমদানিতে আগ্রহী ইরান-ভারতের ব্যবসায়ীরা ॥ বিশ্বের ২১টি দেশে আছে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উইং। যেখানে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বাণিজ্যের আগ্রহ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে বাণিজ্যিক উইংগুলোতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহের বিষয়গুলো সম্প্রতি সংকলন করেছে ইপিবি। সংকলিত তালিকাটি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে জাহাজ আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইরান ও ভারতের ব্যবসায়ীরা। সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে নির্মিত জাহাজ আমদানিতে আগ্রহী ইরানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম রেডিসন গ্রুপ। তেহরানে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উইংয়ে এ আগ্রহ প্রকাশ করেছে গ্রুপটি। এছাড়া ভারতের নয়াদিল্লীতে অবস্থিত বাণিজ্যিক উইংয়ে বাংলাদেশে নির্মিত জাহাজ আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এ্যাডমনিটাম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ফেডরিক লেইরম্যানের বরাতে দিল্লীতে বাণিজ্যিক উইংয়ে প্রকাশ করা এ আগ্রহের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে ইপিবি সংকলিত তালিকায়। জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বলেন, ‘আমরা নিয়মিতভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উইংগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করি। উইংগুলো থেকে বাংলাদেশের রফতানিকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে এমন তথ্য সংগ্রহ করি। এ ধারাবাহিকতায় এক প্রান্তিকের আগ্রহ সংকলন করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের জাহাজ আমদানিতে ইরান ও ভারতের বেসরকারী ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে।’