চলতি ২০২০ সাল শেষে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। এ পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির এমন পূর্বাভাসে বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। শুধু তাই নয়, ভারতের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীও এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রার সুনাম করেছেন। আর ভারতকে করেছেন কটাক্ষ। করোনা মহামারীতে যেখানে সারাবিশ্বের অর্থনীতি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে চলে গেছে সেখানে বাংলাদেশ উচ্চ মাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে রয়েছে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে। “পড়ছে ভারত! মাথাপিছু উৎপাদনে ‘অচ্ছে দিন’ যাচ্ছে বাংলাদেশে” শীর্ষক প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজারের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন। অর্থাৎ ভারতের অর্থনীতি পড়ে যাচ্ছে আর বাংলাদেশের অর্থনীতির মাথাপিছু উৎপাদনের দিন যাচ্ছে দারুণ। প্রায় একই রকম শিরোনামে করেছে বাংলা দৈনিক এখন “সময়” ও “এই সময়”। আরেক বাংলা দৈনিক “বর্তমান” তাদের প্রথম পাতায় লিখেছে “আর্থিক বৃদ্ধিতে ভারতকে পিছনে ফেলবে বাংলাদেশ, ভারতের জন্য অশনিসংকেত আইএমএফের”। পত্রিকাটি বলেছে, ভারতের অর্থনীতির জন্য অনেক খারাপ খবরই শুনিয়েছে আইএমএফ। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে দিয়েছে সুখবর। এ ছাড়া প্রায় একই ধরনের সংবাদ পরিবেশ করেছে ভারতের জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক মিডিয়া এনডিটিভিও। চ্যানেলটি তাদের অনলাইন সংস্করণেও গুরুত্ব সহকারে সংবাদ প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উচ্চ ধারার উৎপাদনমুখী জিডিপির প্রশংসা করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনাও করেছে ভারতীয় পত্রিকাগুলো। আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার ধাক্কায় টলমল অর্থনীতি। কিন্তু যা আশঙ্কা করা হচ্ছে তার থেকেও খারাপ হতে পারে ভারতের পরিস্থিতি। চলতি বছরে এ দেশের মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) বাংলাদেশেরও নিচে চলে যেতে পারে। এমনটাই মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এমনকি জিডিপির হার ১০ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে অশনিসংকেত দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
পত্রিকাগুলোর অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সন ঘেটে দেখা গেছে, দ্য হিন্দ, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দৈনিক আজকাল, কলকাতা থেকে প্রকাশিত এবেলা, সংবাদ প্রতিদিন, দ্য এশিয়ান এইজ, দ্য টেলিগ্রাফ এই খরবটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশের স্তুতি গাওয়া হয়েছে। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে আইএমএফ-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ (ডব্লিউইও)। তাতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে (যা ২০২১ সালের মার্চে শেষ হচ্ছে) ভারতের মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন দাঁড়াবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকার কিছু বেশি। সেখানে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। আইএমএফ আশঙ্কা করছে, গত চার বছরে এটাই রেকর্ড পতন হতে চলেছে। গত জুন মাসেই আইএমএফ জানিয়েছিল, ভারতের জিডিপি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমতে পারে। তার মাস চারেকের মাথায় আন্তর্জাতিক ওই সংস্থার রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, চলতি বছরে জিডিপির হারে ভয়াবহ পতন ঘটতে পারে। অর্থনীতির এই মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ কী? এর কারণ হিসেবে করোনা এবং তার জেরে টানা লকডাউনকেই চিহ্নিত করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তার জেরে অর্থনীতির স্বাভাবিক চলন যে জোর ধাক্কা খেয়েছে তা মানছেন সবাই।
বর্তমানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতি আগেই টলমল। এবার আরও খারাপ খবর শোনাল আইএমএফ। চলতি অর্থবর্ষে মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশও পিছনে ফেলতে পারে ভারতকে। মঙ্গলবারই ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’-এর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আইএমএফ। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবর্ষে দেশের জিডিপি সংকোচন হবে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। সেই নিরিখেই বাংলাদেশের নিচে চলে যাবে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন। বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর তুলনায় সব থেকে বেশি সংকুচিত হবে ভারতীয় অর্থনীতি।