ডেস্ক নিউজ
গত ০৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা থাকায় সরকার তাকে সম্মানস্বরূপ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যদায় তার দাফন কার্য সম্পন্ন করে l এই রাজনীতিবিদের লাশ দেশে আনাতেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে জীবদ্দশায় সাদেক হোসেন খোকার দেশে না আসাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মহল এই বলে গুজব ছড়াচ্ছে যে, সাদেক হোসেন খোকাকে সরকার দেশে আসতে দেয়নি। যদিও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা, বরং সুযোগ থাকলেও সুচিকিৎসা এবং চলমান বিভিন্ন মামলার কারণে নিজেই দেশে ফিরেননি এই সাবেক মেয়র।
জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে কিডনী এবং ফুসফুস ক্যান্সার রোগে আক্ৰান্ত হন সাদেক হোসেন খোকা l পরবর্তীতে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক যান l সেখানে তিনি পরিবারসহ বসবাস করে চিকিৎসা এবং একইসাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চলমান রেখেছিলেন বিএনপির সঙ্গে l চলতি বছরের অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবার তাকে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬৮ বছর বয়সে তিনি মৃর্তুবরণ করেন l
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ১৭ টি মামলা চলমান রয়েছে, যার মধ্যে দুটি মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। রায় প্রদানকৃত মামলা দুটি হলো- রমনা থানায় মামলা নং- ০৫, এতে গুলশানে বাড়ি ও কালিয়াকৈরে জায়গা সংত্রান্ত দুর্নীতি মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে ১৩ বছরের জেল প্রদান করে। অন্য মামলাটির নাম্বার- ২১, এতে বনানীতে সরকারি বিল্ডিং এর কার পার্কিং ইজারা না দিয়ে দলীয় লোকেদের মধ্যে বন্টন সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় তাকে ৬ বছরের জেল প্রদান করা হয়।
মূলত সেকারণেই চিকিৎসার জন্যে বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফিরে আসতে আগ্রহী হননি সাদেক হোসেন খোকা। তার পরিবারের সদস্যরাও চায়নি তিনি অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে মামলা সমূহ মোকাবেলা করেন। এটি একান্তই সাদেক হোসেন খোকার পারিবারিক সিদ্ধান্ত ছিল, এতে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ ছিলোনা।
এদিকে, সাদেক হোসেন খোকা ও তার স্ত্রীর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় গত ২০১৭ সালে। কিন্তু পরবর্তীতে পাসপোর্ট নবায়ন না করায় তাদের দুজনেরই দেশে ফেরায় জটিলতা দেখা দেয়। সাদেক হোসেন খোকার পরিবার থেকে দাবি করা হয়, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসে নবায়নের জন্যে পাসপোর্ট জমা দেয়া হলেও তাদেরকে নতুন পাসপোর্ট দেয়া হয়নি। তবে এক্ষেত্রেও তিনি কিংবা তার পরিবার চাইলেই ট্রাভেল ডকুমেটন্টস নিয়ে দেশে ফিরতে পারতেন। কিন্তু মূলত দেশে চলমান মামলা সমূহ এবং দুটি মালমার রায়, অন্যদিকে অসুস্থতার কথা বিবেচনা করেই সাদেক হোসেন খোকার পরিবার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।