ডেস্ক নিউজ
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আগামী জুন মাসে স্বপ্নের ঠিকানা পাচ্ছেন আরও ৫৫ হাজার ভুমিহীন ও গৃহহীন মানুষ। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানে সারা দেশে তাদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। প্রতিটি ঘরে দুটি শয়নকক্ষ, একটি করে বারান্দা, রান্নাঘর, গোসলখানা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণা অনুযায়ী ভুমিহীনদের দুর্যোগ সহনীয় ওই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে প্রথম দফায় প্রায় ৭০ হাজার ভুমিহীনকে ঘর দেওয়া হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রায় ৯ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের ১০০ বছরপূর্তি উপলক্ষে মুজিব শতবর্ষ পালন করছে সরকার। বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জাতির পিতার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভুমি ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি পরিবারকে ঘর ও জমি দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ থাকা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এই কাজ করছে। খাসজমিতে গুচ্ছ ভিত্তিতে এসব ঘর তৈরি হচ্ছে। কোথাও কোথাও এসব ঘরের নাম দেওয়া হচ্ছে ‘স্বপ্ননীড়’, কোথাও নামকরণ হচ্ছে ‘শতনীড়’, আবার কোথাও ‘মুজিব ভিলেজ’।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, মুজিব শতবর্ষে দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে। তাঁর উদ্যোগে ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। একসঙ্গে এত ভুমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার ঘটনা বিরল। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ হাজার ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের প্রায় ৫৫ হাজার ঘর হস্তান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে দেশে দুই ধরনের মানুষকে ঘর করে দিচ্ছে সরকার। প্রথমত, যারা ভুমিহীন ও গৃহহীন। আরেক ধরনের মানুষ আছেন, যাদের ১ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই কিংবা থাকলেও একেবারে জরাজীর্ণ। গত বছরের জুন পর্যন্ত এই দুই ধরনের মানুষের তালিকাও করা হয়েছে। এর মধ্যে ভুমিহীন-গৃহহীন পরিবার ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি। অন্যদিকে অল্প জমি আছে, কিন্তু ঘরহীন বা থাকলেও জরাজীর্ণ এমন পরিবার আছে ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি।
সূত্রটি আরও জানায়, দ্বিতীয় ধাপের ঘর আগামী জুনে হস্তান্তর করা হবে। তারিখ চূড়ান্ত করা না হলেও জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে এই ঘর হস্তান্তরের জোর সম্ভাবনা। দ্বিতীয় ধাপে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫১৪টি। দ্বিতীয় পর্বের এই আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৯১২টি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৬ হাজার ৪৪৮টি। ময়মনসিংহ বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১৪০টি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২৩৭২টি। চট্টগ্রাম বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১৪০১টি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৯১৬১টি। রংপুর বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১২ হাজার ৩৯১টি। রাজশাহী বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১ হাজার ৫৬৮টি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫ হাজার ৬০৪টি। খুলনা বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৮১২টি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৩ হাজার ৯৯টি। বরিশাল বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৭ হাজার ৬২৭টি। সিলেট বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ২২৩টি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১ হাজার ৭৫৬টি।
সূত্র জানায়, উপকারভোগীদের মধ্যে যাদের জমি আছে, তারা শুধু ঘর পাবে। যাদের জমি নেই, তারা ২ শতাংশ জমি পাবে (বন্দোবস্ত)। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘর তৈরিতে খরচ হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সরকারের নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে এসব ঘর। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট থাকছে। টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের এই উদ্যোগ বিশ্বের ইতিহাসে নতুন সংযোজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভুমিহীনদের ঠিকানা দিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের বিশাল অর্জন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা কাজগুলো করে যাচ্ছি।’