ডেস্ক নিউজ
পৌরসভার মতো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পরিষদের সদস্য কারা হবেন সেটিতেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন আইনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র বা তার প্রতিনিধি এর সদস্য হবেন। আর ইউএনওরা থাকবেন অবজার্ভার, তাদের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না। শুধু জনপ্রতিনিধিরাই ভোট দেবেন।
এমন বিধান রেখে জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সকালে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। এতে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সভা শেষে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুই কেবিনেট মিটিং আগে স্থানীয় সরকার থেকে একটি আইন সংশোধনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটি ছিল পৌরসভা আইন। এটাতে বিধান ছিল পৌরসভা চেয়ারম্যানের একটি মেয়াদ ছিল ৪ বছর বা ৫ বছরের জন্য থাকবেন। কিন্তু পরবর্তীতে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনি কন্টিনিউ করবেন।
এতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পৌরসভায় মামলার কারণে ১৪-১৫ বছরও একজন চেয়ারম্যান থাকতেন। জেলা পরিষদেও এটাই ছিল বিধান। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তিনি চেয়ারম্যান থাকছিলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এটাতে সংশোধন নিয়ে এসেছে। এটাও সেই পৌরসভা আইনের মতো মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যত দিন পরিষদ পুনর্গঠন করা না হবে তত দিন সরকার প্রশাসক দিয়ে রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, সদস্যদের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা এটির সদস্য হবেন, পৌরসভার মেয়ররা সদস্য হবেন এবং তাদের সিটি করপোরেশনের মেয়রের প্রতিনিধিরা সদস্য হবেন। আর ইউএনওদের রিকমান্ড করা হয়েছে তারা অবজারভার হিসেবে থাকবে। বোর্ডটা রিভাইজ করার রিকমেন্ডেশন করা হয়েছে।
ইউএনওরা ননভোটিং অবজার্ভিং মেম্বার থাকবেন। শুধু পাবলিক রিপ্রেজেনটেটিভরা ভোট দিতে পারবেন। তবে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাথে সাথে যদি কেউ ইলেক্টেড বা নমিনেটেড হয়ে যায় তা হলে তার কাছে ক্ষমতা চলে যাবে।
সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কোভিড-১৯ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উল্লেখ করে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যেহেতু কোভিড সংক্রমণের দুই বছর হয়ে গেছে। সে জন্য আমাদের একটা প্রটোকলও ডেভেলপ হয়ে গেছে। সুতরাং, সবাইকে আরেকটু জোরেশোরে কাজ করে আমাদের ব্যাকলক যদি থাকে সেটা ডেভেলপমেন্ট ফেইজটা আগের মতো নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় দেয়া বিধিনিষেধ এখনও কিছু কিছু রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গভবনে এবার ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রোগ্রাম হবে, কারণ সেখানে অবাধ মেলামেশা হবে না। অবাধ মেলামেশা টাইপের বিষয়গুলোকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সনদ না নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এত দিন আমাদের সিনেমাগুলো অনুমোদন করা হতো ১৯৬৩ সালের সেন্সরশিপ অব ফিল্ম অ্যাক্ট-১৯৬৩ এবং ১৯৭২ সালের একটি অ্যামেন্ডমেন্ট অনুযায়ী। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে আইনটিকে সংশোধন করা হয়েছিল।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এটাকে মোডিফিকেশন করা হয়েছে যে, আইনটি একচুয়ালি সেন্সরশিপ আইন থাকা ঠিক হবে না, এটা সার্টিফিকেশন আইন হওয়া উচিত। তার একটা পার্ট থাকবে সেন্সর। শুধু সেন্সর থাকলে এখানে অন্যরকম অসুবিধা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এখন সার্টিফিকেশন আইন করা হয়েছে। সার্টিফিকেশন আইনে গেলে সেখানে সেন্সর একটা পার্ট থাকবে। সে জন্য তারা একটা অ্যামেন্ডমেন্ট নিয়ে এসেছিল, এখানে খুব বেশি বা ম্যাসিভ কোনো চেঞ্জ হয়নি। সেন্সরশিপ যে আইনটি ছিল, তার সাথে কিছু কিছু যোগ করে এ আইনটা নিয়ে আসা হয়েছে। বোর্ডে আগের মতোই একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। ১৪ জন সদস্যসহ ১৫ জনের একটি বোর্ড থাকবে, যারা সার্টিফিকেট দেবেন। চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে শ্রেণিবিন্যাস ও মূল্যায়ন পদ্ধতি করা হবে। সেটি বিধি নিয়ে নির্ধারণ করা হবে। ৭ সদস্যের একটি আপিল বোর্ড থাকবে। সেখানে আগের মতোই ক্যাবিনেট সেক্রেটারি সভাপতি থাকবেন।
আইনের খসড়ায় শাস্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি সার্টিফিকেশনবিহীন কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন তা হলে সে অপরাধে তিনি অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর কোনো ব্যক্তি যদি কোনো চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর কোনো টেম্পারিং করেন। অনেক সময় যে সিনগুলো সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত না বা সেন্সর না, সেগুলো যোগ করেন, তাহলে ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা হবে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০২০-২১ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ৮৭ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি ৩০ জুন বা তার আশপাশের সময়ে যান চলাচলের জন্য ওপেন করে দেয়া হবে। জনগণের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। রফতানি আয় বৃদ্ধি আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ১৩ ভাগ বেশি।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ৫৩ হাজার ৩৪০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের বসবাসের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা একটা স্পেশাল ভাষণ। স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে তিনি এ ভাষণ দেবেন। সেটা আজ (সোমবার) মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে দেয়া হয়েছে। আগামী ২৪ তারিখে এ ভাষণ প্রচার করা হবে।