করোনার টিকা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা না হওয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে প্রথমে ভীতি, সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই সংশয় কেটে মানুষের মধ্যে টিকা টিকা নেয়ার আগ্রহ বাড়ছে।
করোনা টিকা দেশে আসার আগে-পরে অনেকেই নানা সংশয়ের কথা বলেছেন। তবে ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে টিকা নিয়ে অজানা ভীতি। এরই মধ্যে সরকারের দুজন প্রতিমন্ত্রী, দুইজন সচিব, কয়েকজন ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা টিকা নিয়েছেন। ৩ শতাধিক চিকিৎসকও প্রথম দিনে টিকা নিয়ে ফেলেছেন। তারা সবাই সুস্থও আছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ফলে টিকা নেয়ার ব্যাপারে আস্থা জন্মাতে শুরু করেছে জনসাধারণের মধ্যে।
এখন অনেকেই অনলাইনে নিবন্ধন করছেন। কেউ আবার খুঁজছেন কোন পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা যায়। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা টিকা দেশে আসার আগে থেকেই অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যেও কেউ কেউ এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার আগে বা পরে কোনো সমস্যা হয় কি-না তা দেখতে চান তারা।
ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের এক আইনজীবী বলেন, দেখি যারা নিচ্ছে তাদের সুবিধা-অসুবিধা হয় কি-না। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে চাই। কেবল তো শুরু হলো। দেশের স্বনামধন্য অনেক চিকিৎসক প্রথমেই টিকা নেয়ায় অনেকের আস্থা ও আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করেন হুমায়ুন।
এদিকে টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ অনলাইন নিবন্ধন করতে গিয়ে কেউ কেউ সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সার্ভারে ঠিকভাবে প্রবেশ করতে পারছেন না। যদিও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রে গিয়েও নিবন্ধন করে টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন নাগরিকরা। নাজিয়া আফরিন নামের একজন নারী বলেন, আমার একজন আত্মীয় তার মায়ের নিবন্ধন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগ্রাধিকার ব্যক্তি ছাড়া সবার জন্য রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ আপাতত নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে সবাই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। ওই তালিকায় থাকাদের তথ্য সার্ভারে ইনপুট দেয়া হয়েছে। তারাই কেবল এখন রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
এদিকে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেছেন, যারা সঠিকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মতারিখ দিতে পারছেন না তারা হয়তো সমস্যার মুখে পড়ছেন। এরই মধ্যে ১ হাজার লোক নিবন্ধন করেছেন।
সমস্যার বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখা অবহিত আছে বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন তারা; কিন্তু নিবন্ধন করেই নিয়েছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। পরে সমস্যার কথা শুনেছি। আশা করি ৭ তারিখ দেশব্যাপী টিকা দেয়া শুরুর আগেই সমস্যার সমাধান হবে।
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঁচজনকে টিকা দেয়া হয়। প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। নার্স রুনু ছাড়াও ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশের দিদারুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ টিকা নেন। ওইদিন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ২৬ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়।
পরদিন গত বৃহস্পতিবার ঢাকার ৫টি হাসপাতালে দেয়া হয় টিকা। এ দিন পাঁচজন ভিআইপিসহ মোট ৫৪১ জন টিকা নেন। মোট ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯৬ জন চিকিৎসক, ৩২ জন নার্স ও অন্যান্য পেশার ২০৮ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৩১ জন পুরুষ এবং ১১০ জন নারী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া জানিয়েছেন সরকারি পাঁচটি হাসপাতালে মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৩৮ জন চিকিৎসক, তিনজন নার্স ও অন্যান্য পেশার ১৭ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ জন চিকিৎসক, ১৩ জন নার্স ও অন্যান্য পেশার ৩৭ জন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন ভিআইপি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ৫৪ জন চিকিৎসক, ৭ জন নার্স এবং অন্যান্য পেশার ৫৮ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্স ও অন্যান্য পেশার ৪৮ জন টিকা নেন।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চারজন ভিআইপিসহ ১৪২ জন ডাক্তার, ৪ জন নার্স ও ৪৮ জন অন্যান্য পেশার মানুষ টিকা নেন। তারা সবাই ভালো রয়েছেন।
এদিকে টিকা প্রাপ্তির জন্য নিবন্ধন নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগ (ইউপি-১) এ নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পাঠানো হয়।