ডেস্ক নিউজ
খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণপত্র (এলসি) না খুলে টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে পাঁচ লাখ ডলার পর্যন্ত সরাসরি লেনদেনে পণ্য আমদানির সুযোগ রেখে আমদানি নীতির খসড়া অনুমোদন করেছে সরকার।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আগের নীতিতে থাকা দুই লাখ ডলার থেকে বাড়িয়ে নতুন এ অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২২-২৪’ এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের জন্য টিটির মাধ্যমে পাঁচ লাখ ডলার পর্যন্ত পণ্য আমদানি করা যাবে, আগে যা ছিল দুই লাখ ডলার পর্যন্ত।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে সচিব বলেন, “যারা শিল্পখাতের তারা কিন্তু যে কোনো অ্যামাউন্টের জিনিস বা ইকুইপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট করতে পারেন। যেমন ধরেন কেউ রেফ্রিজারেটর তৈরির বিভিন্ন জিনিসের পার্টসের ব্যবসা করে, সে এলসি করে কিন্তু যে কোনো অ্যামাউন্টের পণ্য আমদানি করতে পারবে। টিটির মাধ্যমে পাঁচ লাখ ডলারের জিনিস কিনতে পারবে।
“ধরেন আমি একটা মোটর পার্টসের দোকান দিলাম, যে কোনো পার্টসের দোকান দিলাম, মেশিনারির দোকান দিলাম। আমি বিক্রি করব, রিটেইলার হিসেবে। তখন আমাকে এ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।”
টিটির সুবিধার কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, মৌলিক জিনিস হচ্ছে এটা যে, আপনি যদি রিটেইল বিজনেস করতে চান, তাহলে পাঁচ লাখ ডলার পর্যন্ত যে কোনো জিনিস আপনি আমদানি করতে পারবেন টিটির মাধ্যমে।
২০১৫-১৮ সালের আমদানি নীতিতে ছিল, বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা এলসি না খুলে বাংলাদেশ থেকে মূল্য পরিশোধ করে বছরে অনধিক দুই লাখ ডলার পর্যন্ত পণ্য আমদানি করতে পারবেন।
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রগুলো ’যুগোপযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক’ করার লক্ষ্য নিয়ে নতুন আমদানি নীতি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, নতুন আমদানি আদেশে কিছু পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আবার কিছু পণ্য আমদানি সহজ করা হয়েছে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি বা বিনিময় হ্রাস পাওয়ার কারণ ছাড়া কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে অথবা আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় পর্যায়ে যদি মূল্য অসমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়, তাহলে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।”
কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ফিউমিগেশন পদ্ধতি তুলে দিতে আন্তর্জাতিক মাধ্যম থেকে অনুরোধ এলেও সরকার তাতে রাজি হয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, “এমন কোনো জিনিস যদি থাকে, যেটা আনতে গেলে আমাদের দেশের ক্ষতি হতে পারে, যেমন কৃষি পণ্য আনতে গেলে এমন কোনো এপিডেমিক (মহামারী) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে যে স্ক্রিনিং পদ্ধতি আছে…।
“আমাদেরকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গা থেকে বারবার রিকুয়েস্ট করা হচ্ছে রেস্ট্রিকশন (প্রতিবন্ধকতা) তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা রাজি হই নাই। কারণ এতে আমাদের ক্ষতি হতে পারে।“
এক্ষেত্রে তুলার উপর থেকে ফিউমিগেশন তুলে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে সায় না দেওয়ার উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আমেরিকা থেকে যে তুলা আনা হয়, আমাদের এখানে ডাবল চেক করা হয়; এটাকে ফিউমিগেশন বলে। ফিউমিগেশন হল- আমরা যখন কোনো কৃষি পণ্য আনি, তখন ওটার মধ্যে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আছে কি না, এটা আমাদের এখানে এপিডেমিক করবে কি না…।’
”আমেরিকা আমাদের বারবার রিকোয়েস্ট করেছে ফিউমিগেশন সিস্টেমটা তুলে দিতে। কিন্তু আমাদের বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, আমেরিকার তুলার মধ্যে একধরনের পোকা থাকে। এ পোকা যদি এয়ারে চলে যায় তাহলে আমাদের দেশের শুধু তুলা না অন্য প্ল্যান্টেও বা ফলেও ম্যাসিভ নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে।”