ডেস্ক নিউজ
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটকের সেবার মান আরও উন্নত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও দক্ষতার সঙ্গে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনার কথাও বলেছেন তিনি।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মঙ্গলবার এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদান নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন নামের একটি প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত অনুমোদন করেনি একনেক। আরও সমীক্ষার জন্য প্রকল্পটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।
নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এ সমীক্ষা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিন হাজার ২৭৯ কোটি টাকার প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ছিল টেলিটক বাংলাদেশ। নিজস্ব সমীক্ষার ভিত্তিতেই প্রকল্পটির উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব করে টেলিটক।
প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার পেছনে টেলিটকের যুক্তি হচ্ছে- শহরাঞ্চলে ইন্টারনেট সহজলভ্য হলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষ এই সুবিধা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। ব্যবসায়িক দিক থেকে লাভজনক না হওয়ায় বেসরকারি খাতের মোবাইল অপারেটগুলো গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দিতে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে। এতে ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি হচ্ছে দেশে।
অবশ্য পরিকল্পনা কমিশনও টেলিটকের দাবি অনুযায়ী প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে। সুপারিশে কমিশন বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল কোম্পানি টেলিটক তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক (থ্রিজি) ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারণ করে ভয়েস কলের পাশাপাশি সুলভ মূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবে। এতে বেসরকারি মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে অধিকতর প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করবে।
টেলিটকের এ প্রকল্পসহ মোট দশটি প্রকল্প একনেকে উত্থাপন করা হয়। বাকি প্রকল্পগুলো অনুমোদন করেছে একনেক। এই নয়টি প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি নতুন। বাকি চারটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। নতুন এবং সংশোধনী মিলে এই নয়টি প্রকল্পের বিপরীতে দুই হাজার ৪২২ কোটি টাকার ব্যয় অনুমোদিত হয়েছে।
একনেকের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং প্রকল্প অনুমোদনের তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন। সাধারণত পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একনেকের বৈঠক শেষে ব্রিফ করে থাকেন। তিনি দেশের বাইরে থাকায় সচিব মঙ্গলবার এ দায়িত্ব পালন করেন।
অনুমোদিত নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। দেশের উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন এবং সহজে জ্বালানি তেল সরবরাহের লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথভাবে পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে দশ লাখ টন ডিজেল আনা সম্ভব হবে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে মেঘনা পেট্রোলিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, বানেশ্বর (রাজশাহী)-সারদা-চারঘাট-ঈশ্বরদী (পাবনা) মহাসড়ককে আঞ্চলিক মহাসড়কের মানে উন্নীতকরণ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সামনে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের সুরক্ষা প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ৭৪ কোটি ২৫ লাখ টাকায় বিসিকের আটটি শিল্পনগরী মেরামত ও পুনর্নির্মাণ। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা এবং জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা।
বাদ বাকি প্রকল্পগুলোর সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে।
একনেক সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।