ডেস্ক নিউজ
দেশের ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা লোপাটের চিন্তা করেছে টেলিনর গ্ৰুপের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোনের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক টেলিনর থেকে প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি (বিটিআরসির ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ও এনবিআরের ৪ হাজার ৮৬ কোটি) টাকা পাওনা বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন থেকেই এই টাকা পরিশোধ নিয়ে নানান তালবাহানা করছে কোম্পানিটি। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে এই ১২ হাজার কোটি টাকা পাওনার বিষয়টি নিয়ে সালিস (আরবিট্রেশন) চাওয়া চাইছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, বিভিন্ন সময় অস্বাভাবিক কর ফাঁকির ফলে নাগালের বাইরে চলে যায় প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই লাগাম টেনে ধরতে বাধ্য হয় বিটিআরসি। বিটিআরসি তাদের বকেয়া টাকা ফেরত পেতে আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালতের মামলার শুনানী শেষে এবং গ্রামীণফোনের আবেদনের উপর ভিত্তি করে কয়েকটি কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দেন আদালত। আপিল বিভাগ শুনানি শেষে প্রথম দফায় বিটিআরসির পাওনা দাবির প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার মধ্যে গ্রামীণফোন এখন কত টাকা দিতে পারবে, তা জানতে চেয়েছিলেন।
শুনানিতে অর্থমন্ত্রীসহ দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ৩ অক্টোবরের অনুষ্ঠিত সভায় দুই কিস্তিতে ২০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তবে শর্ত ছিল, গ্রামীণফোনের ওপর বিটিআরসির আরোপ করা সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু সকল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবং মহামান্য আদালতের রায় উপেক্ষা করে গত ১৯ ডিসেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের কাছে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে গ্রামীণফোন। নিরীক্ষা দাবির পাওনা টাকা নিয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি ল ফার্মের মাধ্যমে চিঠিটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
এর আগে বিটিআরসি’র পাওনা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা ৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু হাইকোর্টের এই নোটিশ আমলে না নিয়ে উল্টো রাষ্ট্রপক্ষকে সাবধান করতেই এমন চিঠি প্রদান করে টেলিনর গ্রুপ।
ইতিহাস পর্যালোচনা দেখা যায়, ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্দ-দৌলাকে পরাজিত করে যখন ইংরেজরা ক্ষমতায় আসে তার আগে তারাও ব্যবসার নাম করে ভারত উপমহাদেশে উপনিবেশ গড়েছিল। সে সময় তাদের সঙ্গী হয়েছিল বাংলার স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মীর জাফর ও তার সহযোগীরা। আর বর্তমানে টেলিনর গ্ৰুপের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিকাই পালন করছে। আর তাদের সবরকম সহায়তা করছে তথাকথিত নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের নেতা ভিপি নূর এবং অন্যান্য সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনসমূহকে আন্দোলনের অর্থ যোগান দিচ্ছেন ড. ইউনুস ও টেলিনর গ্ৰুপ। ১২ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকির কেলেঙ্কারি হতে সরকারের মনোযোগ অন্যত্র সরাতেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য অর্থ যোগান দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, ভিলেজ ফোন প্রোগ্রাম বা পল্লীফোন দেশের দরিদ্র জনগণকে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে ড. ইউনুসের মাধ্যমে গ্রামীণফোন-জিটিসি-গ্রামীণ ব্যাংকের সহায়তায় ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশের জিএসএম ভিত্তিক মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী কোম্পানিটি। যেখানে নরওয়েজিয়ান কোম্পানি টেলিনর গ্রামীণফোনের ৫৫.৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং ৩৪.২% শেয়ারের অংশীদার ড. ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক।