ডেস্ক নিউজ
ট্রেনের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে ভ্রমণ করার সময় অবশ্যই রাখতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড। ২৩ এপ্রিল থেকে আবারও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে এই নিয়ম। যাদের কাছে এনআইডি কার্ড নেই তাদের জন্মনিবন্ধন দেখাতে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন যাত্রীরা। এতে কালোবাজারির দৌরাত্ম্য কমবে বলে আশা করেন তারা।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, টিকিট কালোবাজারির দীর্ঘদিনের অভিযোগের সমাধান করা হবে। সেই লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। করোনার আগে একবার শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন থেকে বাধ্যতামূলক করা হলো এই নিয়ম। যাত্রীদের এই নিয়ম মেনে চলার আহ্বান
জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সারা রাত দাঁড়িয়ে থেকে কাউন্টার খোলার ঘণ্টাখানিকের মধ্যেই টিকিট শেষ এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। যাত্রীরা সবসময় বলে আসছেন, কালোবাজারিরা এই টিকিট কিনে ফেলছেন। লাইনের শুরুর দিকে কালোবাজারিরাই দাঁড়ান। যে যার মতো করে অনেকগুলো টিকিট ক্রয় করেন। পরে অবশ্য এসব টিকিট বেশি দামে কালোবাজারিদের কাছ থেকে কিনতে হয় যাত্রীদের। এতে বেশ ভালো সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।
তাই রেলপথ মন্ত্রণালয় এবার থেকে স্থায়ী সিদ্ধান্তে এসেছে। আসছে ২৩ এপ্রিল থেকে যার যার টিকিট তাকেই কিনতে হবে। টিকিট ক্রয়ের সময় দেখাতে হবে জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্মনিবন্ধন। আর শিক্ষার্থীদের জন্য থাকতে হবে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড।
বুধবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় টিকিট ক্রয় করে যাত্রা করছেন যাত্রীরা। অনেকে এসেছেন খবর নিতে কবে থেকে ছাড়া হবে ঈদের টিকিট। এবার উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের সড়কগুলোর বেহাল দশা হওয়ায় ট্রেনে যাত্রীর চাপ বাড়বে। অনেকে আবার ঈদের টিকিট ছাড়ার আগেই অন্যান্য দিনের টিকিট কিনে পরিবারকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। স্কুল-কলেজ খোলা থাকায় এতদিন বাড়ি পাঠাতে পারেননি তারা। তবে স্কুল বন্ধ দেয়ায় আজ থেকেই গ্রামের দিকে ছুটবেন অনেক অভিভাবক।
বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেন এক কর্মকর্তা বলেন, আমার মেয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে পরে। আরেক মেয়ে পরে মতিঝিল গালর্স স্কুলে। তাদের আজ শেষ ক্লাস। আগামীকাল থেকে বন্ধ। তাই আজই টিকিট কিনতে আসলাম। কাল বা পরশু যেদিনের টিকিট পাই সেদিনের টিকিট কিনে বাচ্চা ও তাদের মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেবো।
আরিছা আঞ্জুম ও অহনা আঞ্জুম দুই বোন পড়াশোনা করেন এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুল এন্ড কলেজে। তারা সকালেই চলে যাবে বাগেরহাট দাদা বাড়ি। এতদিন স্কুল খোলা থাকায় যেতে পারেনি।
টিকিট কাটতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমি সবসময় ট্রেনে করেই পঞ্চগড় যাতায়াত করি। আজও টিকিট কাটলাম। আমার ও স্ত্রীর। জাতীয় পরিচয় পত্র সঙ্গে না থাকায় একটু ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। পরে সেই পরিচয়পত্র ছবি মোবাইলে দেখিয়ে নাম্বার দিয়ে যাচাই করে টিকিট নিতে হয়েছে।
আসলাম হক বলেন, সঙ্গে সবসময় পরিচয়পত্র রাখা কিছুটা কঠিন। কারণ অনেকের সঙ্গেই থাকে না। তারপরও টিকিট কালোবাজারি রোধে এই ব্যবস্থাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিছুটা কষ্ট হলেও এই ব্যবস্থা চালু থাকুক।
হামিদা খাতুন বলেন, আমার স্বামী ঢাকার বাইরে থাকেন। তিনি অনলাইনে টিকিট কিনে দিয়েছেন। এখন এসে দেখি আইডিকার্ড ছাড়া টিকিট দিবে না। পরে আইডিকার্ড দেখানো পর টিকিট দেয়া হলো। এটা খুবই ভালো পদ্ধতি। কিন্তু আমাদের জন্য একটু কঠিন। সবসময় তো আমরা বাসা থেকে বেরিয়ে টিকিট কিনি না।
জুলেখা আক্তার বলেন, আমরা টিকিট পরিচিত লোকজন দিয়ে কাটাতাম। এখন এই পদ্ধতির কারণে তাদের দিয়ে আর টিকিট নিতে পারব না। আমাকেই আসতে হবে। তারপরও এটা ভালো হয়েছে। আমাকে একবার পাঁচশ’ টাকার টিকিট এক হাজার টাকায় কিনতে হয়েছিল। এখন থেকে আর কালোবাজারি থাকবে না।
তবে টিকিট কাটতে এসে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে স্টুডেন্টদের। তাদের সঙ্গে জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় বেগ পেতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আনজুম আক্তার বলেন, আমার এখনো আইডিকার্ড হয়নি। এখন আমি যাত্রা করব কীভাবে। স্টুডেন্ট আইডিকার্ড এপিস্নকেবল করার দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আলিমুল হক বলেন, আমার সঙ্গে স্টুডেন্ট কার্ড রয়েছে। কিন্তু এখানে তো জন্মসনদ দেখাতে বলা হয়েছে। সেটা তো আমরা সঙ্গে নেই। এখন আমি কি করব বুঝতে পারছি না। তবে আমি ট্রেনেই ভ্রমণ করতে চাই। রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাজশাহী যেতে নিরাপদ যাত্রা একমাত্র ট্রেন।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যাত্রীদের ভালোর জন্য। তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা যেন সঙ্গে এনআইডি বা জন্ম সনদ নিয়ে আসে। আমাদের এই নিয়মটি খুব দ্রম্নত মেনে নেয়। তাহলে আর কালোবাজারি স্টেশনে থাকবে না। অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে না টিকিট কিনতে।
তিনি বলেন, আপনাদের সবার প্রতি অনুরোধ আপনার পরিবারের চার জনের জন্য টিকিট কিনুন। সঙ্গে সবার জন্মসনদ বা এনআইডি নিয়ে আসুন। আবার যাত্রার সময় সঙ্গে এগুলো রাখুন। সঙ্গে না থাকলে যাত্রা করতে পারবেন না। আর করতে পারলেও চেকিং হলে গুনতে হবে মামলার টাকা। সে ক্ষেত্রে যাত্রাটি হয়ে উঠবে দুর্বিষহ। তাই সবার প্রতি আমাদের অনুরোধ টিকিট কেনা ও যাত্রার সময় এনআইডি বা জন্মসনদ সঙ্গে রাখুন।
আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি। টিকিট বিক্রি হবে যথাক্রমে ২৩ এপ্রিল ২৭ এপ্রিলের, ২৪ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ২৫ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের, ২৬ এপ্রিল ৩০ এপ্রিলের ও ২৭ এপ্রিল ১ মে’র। রাজধানীর পাঁচটি স্থান থেকে টিকিট বিক্রি হবে। কমলাপুর থেকে পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে।
এবারের ঈদে যাত্রীদের জন্য প্রতিদিন ২৬ হাজার ৬৬৩টি টিকিট বিক্রি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রতি ট্রেনে একটি করে নারীদের জন্য কোচ বরাদ্দ থাকবে। নারীরা সম্পূর্ণ ট্রেনেই চড়তে পারবেন। তারপরও একটি কোচ আলাদা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। যেসব স্থানে টিকিট বিক্রি হবে সেখানে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কাউন্টার থাকবে।