ডেস্ক নিউজ
ডলার বাজারে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে ১২ ব্যাংক। এ টাকা কৃষি উন্নয়নের চারটি খাতে আগামী এক বছরের মধ্যে খরচ করতে হবে। প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে খরচের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠাতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। গত মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অতিরিক্ত মুনাফা করা ১২ ব্যাংক হলো- বিদেশি মালিকানার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, সিটি, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, সাউথইস্ট, এনসিসি, মার্কেন্টাইল, ব্যাংক এশিয়া, ইউসিবি ও ঢাকা ব্যাংক। ডলার বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে এসব ব্যাংকের অতিরিক্ত মুনাফা করার তথ্য উঠে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে। বিভিন্ন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৮ আগস্ট স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ব্র্যাক, দি সিটি, সাউথইস্ট, ডাচ্-বাংলা ও প্রাইম ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর ১৮ আগস্ট এমডিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর বাকি ৬ ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কঠোর অবস্থান থেকে পিছু হটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান নিজ নিজ কাজে ফিরেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক পরে পরিদর্শনকালীন ডলার থেকে মুনাফার অর্ধেক সিএসআরে খরচ করার নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পর সিএসআরের টাকা কীভাবে, কোথায় খরচ করতে হবে, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেয় কোনো কোনো ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে একই রকম নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেন থেকে অর্জিত মুনাফার অর্ধেক বাবদ সিএসআর তহবিলে সংরক্ষিত টাকার ওপর বিধি অনুযায়ী সরকারের আয়কর পরিশোধ করতে হবে। বাকি টাকা চারটি খাত- কৃষি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি যন্ত্রপাতি কেনা, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন ও গুণগত মানসম্পন্ন উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গবেষণা কাজে ব্যবহার করতে হবে। এ টাকা আগামী এক বছরের মধ্যে উল্লেখিত চারটির প্রত্যেক খাতে ব্যাংকের নিজ বিবেচনায় ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবেই একটি বা দুটি খাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। টাকা ব্যবহারের অগ্রগতি প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগে (ডিভিশন-২) পাঠাতে হবে।
বাজার স্থিতিশীলতা রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিনই ডলার বিক্রিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। বাজার ঠিক রাখতে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। গতকালও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে আরও ৮ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮৯ কোটি ডলার। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গতকাল দিন শেষে ৩৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। গত বছরের আগস্টে যেখানে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। এভাবে বিক্রির পরও সরবরাহে ঘাটতির কারণে আমদানিতে এখনও ১০৬ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। এ বছরের শুরুতেও যা ৮৬ টাকার নিচে ছিল।