দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে চলবে এই মেট্রোট্রেন। স্টেশনগুলোও হবে মাটির নিচেই। টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে এই মাটির নিচের লাইন খোঁড়া হবে। এতে সড়কের ওপরে কাজ না থাকায় যান চলাচলে ভোগান্তি হবে না বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
এমআরটি লাইন-১ নামে পরিচিত আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল রুটের প্রকল্প পরিচালক মো. সাইদুল হক জানান, এই মেট্রোরুটের দুটি অংশ। একটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। আরেকটি নতুন বাজার থেকে শুরু হয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক-কুড়িল-৩০০ ফিট সড়ক দিয়ে রুপগঞ্চের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত। আর এই পিতলগঞ্জেই হবে পাতাল মেট্রোরেলের ডিপো। এখন সেখানে জমি অধিগ্রহণ চলছে। তবে ৩০০ ফুট থেকে পিতলগঞ্জ অংশ হবে এলিভেটেড বা উড়াল পথ আকারে।বিজ্ঞাপন
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (ডিএমটিসিএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, পাতাল রেল করা ব্যয়বহুল। পূর্বাচল অংশে এখনও জনবসতি না থাকায় কাজ করতে গেলে ভোগান্তি হবে না। ফলে নতুন বাজার ও কুড়িল থেকে পিতলগঞ্জ সাড়ে ১১ কিলোমিটার উড়ালসেতু আকারে চলবে মেট্রোরেল। পথে পড়বে ৯ টি স্টেশন। আর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর প্রায় ২০ কিলোমিটার হবে আন্ডারগ্রাউন্ড। এ পথে ৯ টি পাতাল স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
পাতালরেলের ১টি রুট হচ্ছে: বিমানবন্দর-বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩-খিলক্ষেত-যমুনা ফিউচার পার্ক-নতুন বাজার-উত্তর বাড্ডা–হাতিরঝিল-পূর্ব-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ-কমলাপুর।
পাতালরেলের পূর্বাচল রুট এলাইনমেন্ট করা হয়েছে, নতুন বাজার-যমুনা ফিউচার পার্ক-বসুন্ধরা-পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি (পিওএইচএস)-মাস্তুল-পূর্বাচল পশ্চিম-পূর্বাচল সেন্টার-পূর্বাচল পূর্ব-পূর্বাচল টার্মিনাল-পিতলগ ডিপো।
প্রকল্প পরিচালক সাইদুল হক সারাবাংলাকে জানান, বর্তমান যে কুড়িল-বাড্ডা সড়ক পথ আছে তার ১০ মিটার নিচ দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড রেলপথ যাবে। কিছু স্থানে উপরের অংশে কাজ থাকবে। যে কারণে যান চলাচলে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে একেকটি স্টেশনে এক থেকে তিনমাস ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাকি রুটের কাজ মাটির নিচে হওয়ায় উপরে টেরই পাওয়া যাবে না। কোনো ভোগান্তিও হবে না।
মেট্রোরেল রুট-১ নিয়ে এই প্রকল্প পরিচালক জানান, টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে চলবে খনন কাজ। দিনে ১০ মিটার করে মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে এগুতে থাকবে টিবিএম মেশিন। একই সঙ্গে রেলপথ রেলট্রাক বসিয়ে দেবে টিবিএম। পরে এই টানেলের ভেতরে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক লাইন টানা হবে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, পাতাল রেলের মালিবাগ অংশে সবচেয়ে বেশি গভীরে যেতে হবে। কারণ সেখানে স্টেশন হবে ৩৭ মিটার নিচে। মাটির নিচে তিনতলা ভবনের স্টেশন হবে।
পাতাল এবং উড়াল মিলিয়ে এমআরটি লাইন ১ এর দৈর্ঘ্য হবে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। নতুন বাজার ও যমুনা ফিউচার পার্ক বিমানবন্দর-কমলাপুর রুটের অংশ হিসেবে পাতাল স্টেশন হবে। নতুন বাজার ষ্টেশনে ইন্টারচেঞ্জ থাকবে। এ রুট ব্যবহার করে বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচল রুটে এবং পূর্বাচল রুট থেকে বিমানবন্দর রুটে যাওয়া যাবে।
এই দুই রুটের প্রয়োজনীয় স্টাডি সার্ভে এবং মূল ডিজাইন শেষ হয়েছে। এখন ডিটেইল ডিজাইন করার কাজ চলছে। আর পিতলগঞ্জে ডিপোর ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
দেশের প্রথম পাতাল রেল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা।
বুয়েটের অধ্যাপক ও গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ডক্টর মুসলেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৬ টি মেট্রোরেল রুট মোট যাত্রীর মাত্র ৪০ ভাগ টানবে। বাকি ৬০ ভাগ মানুষ কিভাবে চলাচল করবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই সরকার ৬০ ভাগ মানুষের জন্য কতটা মনোযোগী হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তার মতে, সরকার শুধু বড় বড় প্রকল্প প্রজেক্টের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। কারণ একটা বড় প্রকল্প কোনো সমাধান বয়ে আনতে পারে না। অনেকগুলো ছোট ছোট পদক্ষেপ নিলে সার্বিকভাবে একটি বড় সমাধান হয়।