ডেস্ক নিউজ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান বলেছেন, একটু বড় রকমের ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হলেই উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর স্থায়ী সমাধান হিসেবে ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় টেকসই বাঁধ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি বাস্তবায়িত হলে ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হলেই আর বাঁধ ভাঙ্গার ভয় থাকবে না। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বুধবার সকাল থেকে ভারতের উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাব থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। তবে ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সময় ভোলার লালমোহন উপজেলায় গাছচাপা পড়ে একজন মারা গেছেন। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সার্বিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বুধবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এতে আমাদের এখানে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। তবে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার মধ্যে রয়েছে- শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, মঠবাড়িয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগর।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকদের অনকূলে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া আছে। এছাড়া আজ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে ১৬ হজার ৫০০ শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি বড় বিপদ থেকে বাংলাদেশ বেঁচে গেছে। বুধবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি বাংলাদেশে আসার কোন সুযোগ নেই, এটা নিশ্চিত। আমাদের একটি সতর্ক সঙ্কেলত (৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত) দেয়া আছে, সেটি আমরা উপযুক্ত সময়ে তুলে নেব।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় জেলা, উপজেলাসমূহে ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য আদান-প্রদানে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি (জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র) ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানে সর্বক্ষণিক কাজ করেছে।
এনামুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর (সিপিপি) ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আনসার, ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। ঝড় আঘাত হানলে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত ছিল। মানবিক সহায়তার যথেষ্ট সংস্থান আগে থেকেই করা ছিল। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার জন্য যথেষ্ট মাস্ক এবং স্বাস্থ্য উপকরণ নিশ্চিত করা হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড় হলেই বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এ বিষয়ে কী কোন স্থায়ী সমাধান নেই- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সেগুলো পুনর্র্নিমাণের কাজ চলছে। বাঁধগুলো অনেক পুরনো। এ জন্য ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় টেকসই বাঁধ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটার জন্য ৩৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে সব উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ মোহসীন বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রস্তুত করা হয়েছে। আরেকটা সভা করে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন করা হবে। মাঠের কাজ শেষ হলে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেটা করব।