নিউজ ডেস্ক :
কোনও কথা নয়। অনুরোধ, ক্ষমা প্রার্থনা, একে-তাকে দিয়ে সুপারিশে লাভ নেই, যে কোনও ধরনের মোটরযান চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেই সংশ্লিষ্ট যানবাহন ডাম্পিং জোনে ফেলবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার মৌখিক নির্দেশে এ কাজ বাস্তবায়ন করছে ট্রাফিক বিভাগ। তবে এ বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য করতে চান না ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা।
শনিবার (৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর সোনাগাঁও ট্রাফিক বক্সে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘‘এটা কমিশনার স্যারের মৌখিক নির্দেশ। আমাদের ডিসি স্যার- এটা আমাদের ওয়্যারলেস সেট দিয়ে জানিয়েছেন কমিশনার স্যারের উদ্ধৃতি দিয়ে।’’
ডিএমপির বিভিন্ন পয়েন্টে কর্তব্যরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, ট্রাফিক আইন মেনে রাস্তায় চলাচল করতে বহু ধরনের সুযোগ বহুবার দেয়া হয়েছে, আইন প্রয়োগ করে জরিমানা করা হচ্ছে কঠোরভাবে। তারপরও প্রায়ই ধরা পড়ছে লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চালক। বিশেষ করে গণপরিবহন চালকদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা খুব বেশি। এরপরে পাওয়া যায় মোটর সাইকেল চালকদের। তারা আলসেমি করে হোক আর অবহেলা করে হোক, কোনও না কোনও কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন না। এজন্য কোনও চালককে যদি পাওয়া যায় তার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তাহলে তার গাড়ি রেকার দিয়ে টেনে সরাসরি ডাম্পিং জোনে ফেলা হবে।
ঈদের পরদিন (৬ জুন, বৃহস্পতিবার) দুপুরে কারওয়ান বাজার এলাকায় একটি মোটর সাইকেল আটক করেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। চালকসহ এতে তিনজন ছিলেন। চালক ছিলেন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। তার লাইসেন্স ছিল না। অনেক অনুরোধ করেও ওইকর্মী তার মোটর সাইকেল ছাড়াতে পারছিলেন না। ঘটনার সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘তিনি যে চাকরিই করুক না কেন, একদিকে তার লাইসেন্স নেই, আরেকদিকে তিনজন আরোহী। পরে তার মোটর সাইকেল সরাসরি ডাম্পিং জোনে পাঠানো হয়।’’
শনিবার (৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক বিজয় সরণি মোড়ে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘‘ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই মানে সংশ্লিষ্ট চালকের বৈধতা নেই যানবাহন চালানোর। সে ক্ষেত্রে আমরা যখন গাড়িটি ধরব, এটাকে রাখব কোথায়? রাস্তায় তো রাখা যাবে না। জায়গা একটাই- ডাম্পিং জোন।’’
‘এটা যানবাহনের হাজতখানা’ — শনিবার দুপুরে একটু রসিকতা করে এ কথা বলেন ফার্মগেট এলাকায় কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ অপরাধ করলে যেমন থানায় নেয়া হয়, তেমনি যানবাহন যদি লাইসেন্স ছাড়া চালানো হয়, সেক্ষেত্রে ডাম্পিং জোনে নেয়ার বিধান। লাইসেন্স না থাকলে তো আর চালককে হাজতে নেয়ার বিধান নেই— তাই এই ব্যবস্থা।’’
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম— এই চার ভাগে বিভক্ত। প্রত্যেক বিভাগের প্রধান ডেপুটি কমিশনার (ডিসি)। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডিসি বলেন, ‘‘এটা কমিশনার স্যারের মৌখিক নির্দেশনা। লিখিত আইন হলে আনুষ্ঠানিক কথা বলতে পারতাম। তবে এই নির্দেশনার দরকার ছিল। কেন-না, এত এত ছাড় দেবার পরও চালকরা লাইসেন্সবিমুখ। এটা হতেই পারে না। এতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরাই কমিশনার স্যারকে সুপারিশ করব। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট চালককে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে কারাদণ্ড যাতে দেয়া হয়, সেই সুপারিশও করা হবে।’’
তথ্য সুত্রঃ dailyjagaran.com