মৃত্যুতেও হারিয়ে যাননি। চলে যাওয়ার ২৪ বছর পরও ভক্ত, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে একইরকম প্রাসঙ্গিক প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহ। ৪৯তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় উচ্চারিত স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ।
অনেকেই বলতেন স্বপ্নের নায়ক। নব্বই দশকের সেরা নায়ক বলা হতো তাকে। এত অল্প সময়ে এতটা জনপ্রিয় এবং এতটা সফলতা এদেশে কোনো সিনেমার নায়ক পাননি।
বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে অসম্ভব জনপ্রিয় এক নায়কের নাম সালমান শাহ। হঠাৎ এসে জয় করা এক সিনেমার যুবরাজ তিনি। যিনি না থেকেও আছেন কোটি ভক্তের মাঝে।
আজ ১৯ সেপ্টেম্বর সবার প্রিয় নায়ক সালমান শাহর জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ ৫০ বছরে পা দিতেন তিনি।মা-বাবার অতি আদরের ইমন ছিলেন তিনি। কাছের বন্ধুরাও তাকে ডাকতেন ইমন নামে। সেই ইমন থেকে তিনি বনে গিয়েছিলেন নব্বই দশকের সবচেয়ে দামি ও চাহিদা সম্পন্ন নায়ক।
প্রথম সিনেমা দিয়েই তার সাফল্যর সোনার কাঠি ঘরে তোলা।সালমানবিহীন এদেশে দীর্ঘ দিন ধরে তার জন্মদিন উদযাপন হয়ে আসছে। যা অন্য কোনো প্রয়াত নায়কের বেলায় তেমনটি চোখে পড়ে না কারও। এদিক থেকে এটা বড় একটি রেকর্ড।১৯ সেপ্টেম্বর দিনটি এলে সালমান ভক্তরা জন্মদিনের কেক কাটেন এখনো। তাকে নিয়ে আলোচনা করেন। তার সিনেমা প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।
সারাদেশে ছড়িয়ে আছেন তার ভক্তরা। সালমান শাহের মতো করে তারা মাথায় টুপি পরেন। প্রিয় নায়কের মতো করে সানগ্লাস পরেন। যা সত্যি বিস্ময়। নায়কের প্রতি ভালোবাসা বুঝি এমনই।আবার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তার জন্মদিনে প্রতি বছর আয়োজন করে অনুষ্ঠানমালার। এবারও তা অব্যাহত থাকছে।তার সমাধিতে ফুল দিয়ে ভক্তরা স্মরণ করেন। দেশের নানা জায়গা থেকে সমাধিতে ভক্তরা যান। অবশ্য জন্মদিনের দিনটিতে একটু বেশিই যান।সালমান শাহ স্মৃতি পরিষদও ১৯ সেপ্টেম্বর এলেই দিনটি উদযাপন করে।
বেশ কয়েক বছর ধরে ঢুলি কমিউনিকেশন সালমান শাহর জন্মদিনকে ঘিরে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। গেল বছর শাকিব খানকে দিয়ে ব্যাপক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সালমান শাহর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী করা হয়েছিল।
এভাবেই সালমান শাহর জন্মদিনের উৎসব ছড়িয়ে পড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। রূপালি জগতের সালমান শাহ কেবল পর্দায় নন, দেশের নানা বয়সী সিনেমা-প্রেমী মানুষদের কাছে আজও বড় একটা জায়গা করে আছেন। যার প্রকাশ ঘটে জন্মদিন এলে।
সালমান শাহের সঙ্গ যারা কাজ করেছেন, তারাও জন্মদিনে তাকে খুব করে মনে করেন। তার প্রথম সিনেমার নায়িকা মৌসুমী বলেন, ‘সালমান কেবল আমার প্রথম সিনেমার নায়ক ছিলেন না, সালমান ছিলেন আমার ছেলেবেলার বন্ধু। জীবনের প্রথম স্কুলে একসঙ্গে পড়েছি। অনেক পরে এসে তার প্রথম সিনেমার নায়িকা হয়েছি। কাজেই শুধু জন্মদিন নয়, সব সময় মনে পড়ে সালমানকে।’
সালমানের সিনেমার আরেক নায়িকা শাবনাজ বলেন, ‘সালমান কতটা জনপ্রিয় ছিলেন এবং কতটা জনপ্রিয় আছেন, আজও তার প্রমাণ মেলে তাকে মনে করার মধ্যে দিয়ে। জন্মদিনে সালমানকে দূর থেকে শুভেচ্ছা জানাই। সালমান নিশ্চয়ই দূর থেকে দেখছেন তাকে আজও বহু মানুষ মনে করেন।’
সালমান শাহের সঙ্গে টেলিভিশন নাটকে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন তানভীন সুইটি। তিনি বলেন, ‘সিনেমার আগে সালমান ছিলেন মডেল ও টিভি নাটকের নায়ক। তাকে ইমন বলেই ডাকতাম। আজও জন্মদিনে বলি, ইমন যেখানে আছ ভালো থেক।’
সালমান শাহ কেবল নায়ক ছিলেন না। গায়কও ছিলেন। শুরুটা করেছিলেন গান দিয়ে। সিনেমায় ব্যস্ততার পর গানটা কমিয়ে দিয়েছিলেন। ছায়ানটে গান শিখেছিলেন তিনি। ছেলেবেলার ও কলেজের বন্ধুরা তাকে প্রথমে গায়ক হিসেবে চিনতেন। মূলত গায়ক থেকে নায়ক হয়েছিলেন সালমান শাহ।
সালমান শাহের নানাবাড়ি সিলেট শহরে। সেখানে জন্ম তার। নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় নানাবাড়িতে আজও রয়েছে সালমান শাহের নানারকম ছবি। জন্মদিনে ভক্তরা বাড়িটিতে ভিড় করেন। সালমানের ছবি দেখে নায়ককে মনে করেন।
সালমান শাহর প্রথম জন্মদিনটি পালন করা হয়েছিল সিলেটের নানাবাড়িতে। এই নায়কের ১৬তম জন্মদিনটি ছিল মনে রাখার মতো। পরিবারের সবাই মিলে খুব জাঁকালোভাবে দিনটি পালন করেছিলেন। ১৬তম জন্মদিনে তিনি শেরওয়ানি পরেছিলেন।
সালমান শাহর প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান দিয়েছেন আরেকটি তথ্য। প্রথম সিনেমার শুটিং করার সময় জন্মদিন পড়ে গিয়েছিল। ওই জন্মদিনটি ইউনিটের সবাই মিলে কেক কেটে পালন করা হয়েছিল।
সালমান শাহর গ্রিন রোডের বাসার ছাদেও একবার বড় করে জন্মদিনের আয়োজন করা হয়েছিল। জন্মদিনে সালমান শাহ সব সময় নতুন পোশাক পরতেন। নিজে ড্রাইভ পছন্দ করতেন। কোনো কোনো জন্মদিনে পরিবার নিয়ে লং ড্রাইভেও যেতেন।
তবে, তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা। কিন্তু, শিল্পীর পরিচয় তার শিল্পকর্ম দিয়ে। যা সালমান শাহ করে গেছেন শতভাগ দরদ ও ভালোবাসা দিয়ে। যার জন্য তার জন্মদিনে দূর থেকেই তার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন সালমান ভক্তরা।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরের দাড়িয়াপাড়ায় নানাবাড়িতে জন্ম সালমান শাহর।