ডেস্ক নিউজ
ঢাকার ওপর গাড়ির চাপ কমাতে আউটার রিং রোড বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। আট লেনের বৃত্তাকার এ সড়ক পথের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১৩২ কিলোমিটার। দুটি পর্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম পর্বে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে কেরানীগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত আট লেনের ৪৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বর্তমানে চার লেনের ১২ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর সঙ্গে আরও চার লেন করা হবে। বাকি ৩৬ কিলোমিটার অংশ জমি অধিগ্রহণ করে সম্পূর্ণ নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।
আট লেন বিশিষ্ট এ সড়কের প্রস্থ হবে ২৪০ থেকে ৩০০ ফুট। এ অংশে ২টি রেস্ট এরিয়া, ৫টি ইন্টারচেঞ্জ, ৬টি ব্রিজ, ২০টি ওভারপাস এবং আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। ৩৬ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে নির্মাণ করতে ৩৮৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ অংশের কাজ শেষ করতে ব্যয় হবে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, এ প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে জি টু জি চুক্তিও হয়েছে। প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপে (পিপিপি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। স্বাভাবিক গতিতে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ২০২৮ সালের মধ্যে এ সড়ক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে।
আর দ্বিতীয় পর্বে ৮৪ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ এবং উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে ব্যয় চিন্তা করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যমান সড়কের মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার ২ লেন এবং ৩৬ কিলোমিটার ৪ লেন করে রয়েছে। এসব সড়ক ৮ লেনে উন্নীত করা হবে। সরু ব্রিজগুলো ভেঙে ৮ লেন বিশিষ্ট করা হবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইন্টারচেঞ্জ, ওভারপাস, আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। এ অংশের উন্নয়ন কাজ কিভাবে সম্পন্ন করা হবে, সেসব বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকাবাসীকে পদ্মা সেতুর কাঙ্ক্ষিত সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে আউডার রিং রোড বাস্তবায়ন জরুরি। সে কারণে এখন জোরেশোরে তৎপরতা চালাচ্ছে সওজ। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে নিবিড় মনিটরিং করা হচ্ছে। খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায়ও (ড্যাপ) আউটার রিং রোড বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। সে কারণে আউটার রিং রোডের প্রস্তাবিত নকশার মধ্যে অন্য কোনো ভূমি ব্যবহারের সুপারিশ রাখা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) আউটার রিং রোডের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আরএসটিপির প্রস্তাবিত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে সওজ। ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শেষ হয়েছে। পিপিপিতে বাস্তবায়নে আগ্রহী জাপানের সঙ্গে জি টু জি চুক্তি করেছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্প উন্মুক্ত করার পরিকল্পনায় সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আশা করি, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হবে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু এবং দু’পারের ৫২ কিলোমিটারসহ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, কেরানীগঞ্জ এলাকা দিয়ে আউটার রিং রোডের যে প্রস্তাবনা রয়েছে, সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে সেতুর কাঙ্ক্ষিত সুফল পাবেন না ঢাকাবাসী।’
তিনি বলেন, আউটার রিং রোড হলে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী মানুষ যার যার সুবিধামতো রিং রোড ব্যবহার করে চলে যাবেন। ভেবে দেখুন, যে লোক উত্তরা যাবেন, তার পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বছিলা বা গাবতলী এলাকা দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে বেড়িবাঁধ সড়ক ব্যবহার করে সে এলাকায় চলে যেতে পারবেন। অন্যান্য এলাকার যাত্রীরাও একইভাবে রিং রোডের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। তাহলে ঢাকার যানজট কমবে এবং অল্প সময়ে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু এবং ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কারণে গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, বরিশাল এলাকার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করছে। এ সম্ভাবণাগুলো কার্যকরভাবে কাজে লাগানো গেলে ওই এলাকার মানুষ ঢাকামুখী হবে না। প্রয়োজন থাকলে দিনে দিনে ঢাকায় এসে কাজ শেষ করে আবার চলে যাবেন তারা। এজন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকাকে ঘিরে রিং রোড করার যে পরিকল্পনা আছে, সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকার বাসযোগ্যতার জন্যও এ রিং রোডটি বাস্তবায়ন করাও খুবই জরুরি।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশে উপনীত করার ঘোষণা করেছে। সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে রাজধানী ঢাকাকে আরও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য উন্নত দেশের ন্যায় সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কেননা, অর্থনৈতিক উন্নতিসহ সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সড়ক নেটওয়ার্কের বড় ভূমিকা রয়েছে। ঢাকার যানজট নিরসনে সরকার বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
ঢাকার চারদিকে ইনার রিং রোড ও আউটার রিং রোড নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইনার রিং রোর্ডের পূর্বাংশের ফিজিবিলিট স্টাডি করা হচ্ছে। আর বিদ্যমান অংশের প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। এসব রিং রোড মূলত বাইপাস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।