ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আর্থিকভাবে সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১২ হাজার পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
সোমবার সন্ধ্যায় ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও জার্মান রেডক্রস ‘কোভিড-১৯–এ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম’ শীর্ষক এ উদ্যোগ নিয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি) মাধ্যমে এসব অর্থসহায়তা দেওয়া হবে।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, এ কার্যক্রমের আওতায় ইতিমধ্যে ডিএসসিসির ৫৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে কোভিড-১৯ সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। আরও ৪৩০ জনের মধ্যে প্রদান করা হবে।
এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকায় ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতির কারণে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে। কিন্তু তারপরও ঢাকায় যারা বসবাস করে, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশই দুস্থ-গরিব, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাই যাঁরা ঢাকার ভোটার, বস্তিবাসী, দুস্থ-দরিদ্র, তাঁরা যাতে এই সুবিধার আওতায় আসেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদারকির অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগের ফলে আজ আন-ব্যাংকড পপুলেশন ৬০ শতাংশ হতে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন চান। তাই এতগুলো ব্যাংক থাকার পরেও আন-ব্যাংকড পপুলেশন এক সময় ৬০ শতাংশ ছিল। বর্তমানে সেটা কমে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মূল কারণ, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে এর দুয়ারগুলো উন্মোচন করেছেন, সুযোগগুলো উন্মোচন করেছে।
ডিএসসিসি মেয়র আরও বলেন, ঢাকা শহর যেহেতু অপরিকল্পিত নগরী। এই অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও ভবন ভেঙে পড়ছে, কোথাও হেলে পড়ছে, আবার কোথাও খালের উপর অবৈধভাবে নির্মিত ভবনগুলো দেবে যাচ্ছে। এরকম নানাবিধ দুর্যোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তার ওপর মহামারী করোনা আমাদের ওপর চেপে বসেছে। সবমিলিয়ে ঢাকাকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার জন্য আমি সবাইকে আন্তরিক অনুরোধ করছি।
মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ১২ হাজার পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে বলে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে ডিএসসিসির ৫৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে কোভিদ-১৯ কিট প্রদান করা হয়েছে, আরও ৪৩০ জনের মাঝে প্রদান করা হবে। এ পর্যন্ত পঞ্চাশটি পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে ৯৫ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে এবং ডিএসসিসির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে করেনার ২য় ঢেউ মোকাবিলায় আরও ৫০টি পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ সালাউদ্দিন, জার্মান রেড ক্রিসেন্টের বাংলাদেশ প্রধান গৌরব রায়, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঢাকা এর সাধারণ সম্পাদক লায়ন শরীফ আলী খান বক্তব্য রাখেন।
অনলাইন প্লাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ ।
উল্লেখ্য যে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদাধিকারবলে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঢাকা সিটি ইউনিটের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।