ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালে ও পরবর্তী সময়ে তারল্য সংকটের দ্রুত সমাধান ও ঋণের বোঝা লাঘবে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ সংকট মোকাবেলায় উচ্চাভিলাষী ও সমন্বিত বৈশ্বিক কর্ম-পরিকল্পনা প্রয়োজন। ইন্টারন্যাশনাল ডেট আর্কিটেকচার এন্ড লিকুইডিটির’ ওপর ‘ফাইন্যান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট ইন দ্য এরা অব কোভিড-১৯ এন্ড বিয়ন্ড ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ভার্চুয়াল বৈঠকে সোমবার (২৯ মার্চ) এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন তিনি।
করোনাকালে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পুরো বিশ্বকে যখন হিমশিম খেতে হচ্ছে, তখন এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণে জরুরি ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস ওএন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্ব-নেতাদের এই বৈঠকের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
এই উচ্চ-পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের লক্ষ্য হলো, তারল্য সরবরাহে ও ঋণ সমস্যা সমাধানে অধিকতর সাহসী ও সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরা।
২০২০ সালে ফাইন্যান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট ইন দ্য এরা অব কোভিড-১৯ এন্ড বিয়ন্ড ইনিশিয়েটিভ (এফএফডিআই)’র পৃষ্ঠপোষকতায় মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তার লক্ষ্যে কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করতে অনুষ্ঠিত কয়েকটি বৈঠকের পর এই ভার্চুয়াল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তায় আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে জি৭, জি২০ এবং ওইসিডি (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট) সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশ, এমডিবিএস (মাল্টিলেটারেল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকস) এবং আইএফআইএস-এর (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন) উচিত বড় পরিসরে ও নতুন ‘স্পেশাল ড্রইং রাইটস’-এর মতো বরাদ্দের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানো।
আন্তর্জাতিক ঋণ কাঠামো সংশোধনের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোকে তাদের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ও’ডে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য তাদের রাজস্ব প্রণোদনা, অর্থনীতিতে বিশেষ সুবিধা ও ঋণ রেয়াত বাড়াতে হবে। এসডিজিএস এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এলডিসিএস (লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিস) উত্তরণের জন্য অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত নতুন আন্তর্জাতিক সহায়তা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দেশে মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী চলাকালে এই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনা মহামারী দেখা দেওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, কিন্তু বিশ্ব এখনও করোনার কারণে যে আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আগামী দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে আনুমানিক প্রায় ৮ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে বলে জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে।
প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা আমাদের জনগণের জীবন ও জীবিকার ওপর থেকে মহামারীর বিরূপ প্রভাবে হ্রাস করার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই ১.২৪ ট্রিলিয়ন টাকা বা ১৪.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা হয়, যা দেশের জিডিপি’র প্রায় ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, নির্বিঘ্নে ব্যবসা কার্যক্রম নিশ্চিতে তার সরকার বাজারে পর্যাপ্ত তারল্য ও ঋণযোগ্য ফান্ড সরবরাহ করেছে। ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট, ফরেন ট্রেড ও ফাইন্যান্স, রেমিটেন্স, বৈদেশিক ঋণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সহনীয় করতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের বিচক্ষণ ঋণ পলিসির কারণে চলমান মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো ভালোভাবে ঋণ পরিশোধে করছে, এবং ‘ঋণ খেলাপী না হওয়ার’ সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছে।