রাজধানীর পল্লবীর বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকারের হদিস ৯ দিনেও মেলেনি। এতে পরিবারটির সদস্যরা চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছে। তারা দ্রুত তিথিকে খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছে।
তিথির পরিবার বলছে, গত ২৫ অক্টোবর থানার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তিথি। এর পর থেকে নিখোঁজ। একই সঙ্গে পরিবারটির দাবি, ‘ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে’ তিথিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করেছে। তিথির ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল।
পুলিশ বলছে, তিথির সন্ধানে সারা দেশে তৎপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এসপিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের সব থানায় তিথির ছবি পাঠানো হয়েছে। থানা-পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও গুরুত্ব দিয়ে তিথির সন্ধান করছে।
তিথির বড় বোন স্মৃতি সরকার গতকাল বলেন, ‘তিথির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অপপ্রচার চালানো হয়। এ নিয়ে ২৩ অক্টোবর পল্লবী থানায় জিডি করেছিল ও। এই মিথ্যা অপপ্রচারকে সত্য ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৬ অক্টোবর তাকে বহিষ্কার করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এরপর থানা থেকে ফোন করে তিথিকে দেখা করতে বলা হয়। বাসা থেকে থানার উদ্দেশে বের হয়ে আমার বোন নিখোঁজ রয়েছে। তাকে অপহরণ করা হয়েছে, না কেউ পরিকল্পিতভাবে ধরে নিয়ে আটকে রেখেছে—কিছুই জানতে পারছি না।’
জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী গতকাল বলেন, ‘তিথির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। তাঁর সন্ধান এখনো মেলেনি। চেষ্টা চলছে।’
যেভাবে নিখোঁজ : পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৫ অক্টোবর পল্লবী থানা থেকে সকাল পৌনে ৯টার দিকে এসআই শুভ পরিচয় দিয়ে একজন মোবাইলে ফোন করে তিথিকে থানায় যেতে বলেন। সকাল ৯টার দিকে থানার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তিথি।
স্মৃতি সরকার বলেন, ‘অনেক খোঁজ করেও তিথির সন্ধান না পেয়ে ২৭ অক্টোবর পল্লবী থানায় জিডি করি।’ তিনি বলেন, পল্লবী থানা থেকে তাঁদের বাসা মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।
তবে পল্লবী থানার পুলিশ বলছে, তিথি সেদিন থানায় আসেননি।
যেভাবে বহিষ্কার : ‘ইসলাম ধর্মকে কটূক্তি করা’ তিথির ফেসবুক স্ট্যাটাসের কিছু স্ক্রিন শট ভাইরাল হয়। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে। ২৬ অক্টোবর তিথিকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিথি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের (২০১৭-২০১৮) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন। সংগঠন থেকেও তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার তিথির বড় বোন আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তিনি তিথির নিখোঁজের বিষয়ে জানিয়েছেন। আমি তাঁকে থানায় জিডি করতে পরামর্শ দিয়েছি।’ এ বিষয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা লাগলে তাঁরা করবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে তিথিকে নিয়ে এখনো ফেসবুকে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গত শনিবার সিআইডির সাইবার পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘মালিবাগ সিআইডি অফিসের চারতলা থেকে তিথি নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন মিথ্যা ও বানোয়াট পোস্ট দেখা যাচ্ছে।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ