ডেস্ক নিউজ
মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক আলট্রা সুপার বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের মধ্যে ২৩০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। এটি এক ধরনের বিনিয়োগ চুক্তি। একই সঙ্গে ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস রেসপন্স ইমার্জেন্সি সাপোর্ট’-এর আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে দুই দেশ।
সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে এসব চুক্তি সই হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিনিয়োগ প্রকল্প দুটির জন্য স্বাক্ষরিত ঋণের যে অংশ নির্মাণ কাজে ব্যবহার হবে তার বাৎসরিক সুদহার শুন্য দশমিক ৬০ শতাংশ। যে অংশ পরামর্শক সেবার জন্য ব্যবহার হবে তার সুদহার শুন্য দশমিক শুন্য এক শতাংশ। আর করোনা সংকট মোকাবেলার ঋণের সুদহার বার্ষিক শুন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ। এসব ঋণের অর্থ লেনদেন সম্পন্ন করার (ফ্রন্ট অ্যান্ড ফি) ক্ষেত্রে শুন্য দশমিক ২ শতাংশ সুদ দিতে হবে। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।
বাংলাদেশের পক্ষে উভয় চুক্তিতে সই করেন ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। আর জাপানের পক্ষে বিনিয়োগ চুক্তিতে ঢাকাস্থ জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং করোনা সংকট মোকাবেলার ঋণ চুক্তিতে বাংলাদেশস্থ জাইকা অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইয়োহো ইয়াকাওয়া সই করেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এছাড়া উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়ক ও যমুনা নদীর উপরে রেল সেতু, ঢাকা শহরের মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্ট ও মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান সরকারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এটা দুই দেশের অকৃত্রিম বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবারিতে ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দুটি আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যার ৪ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের। আর জাপান দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ১১৯ কোটি টাকা দেবে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল)। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প ২০২৩ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পের ৪৯ শতাংশ ভৌত কাজ শেষ হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) বা দ্বিতীয় পর্যায়ের মেট্রোরেল প্রকল্পের দৈর্ঘ ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রুট এবং নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো রুটে বিভক্ত। বিমানবন্দর রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার এবং মোট পাতাল স্টেশনের সংখ্যা ১২টি। এ রুটেই দেশে প্রথম পাতাল রেল নির্মিত হতে যাচ্ছে। পূর্বাচল রুটের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। সম্পূর্ণ অংশ উড়াল এবং মোট স্টেশন সংখ্যা ৯টি। নতুন বাজার স্টেশনে ইন্টারচেঞ্জ থাকবে। উভয় রুটের গবেষণা, জরিপ ও মূল নকশার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বিস্তারিত নকশার কাজ চলছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ১৩ হাজার ১১ কোটি এবং জাপান দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। জাপানি সংস্থা জাইকা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে অর্থ ছাড় করছে। প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ করার কথা।
এছাড়া করোনা সংকট মোকাবেলার জন্য যে ঋণ নেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং মহামারির কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা উত্তরণে সরকারঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাজেট সহায়তা দেওয়া হবে।