ডেস্ক নিউজ
দেশের প্রথম পাতালরেলের মূল পর্বের কাজ শুরু হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে মূল ডিজাইন। দ্রুতগতিতে কাজ চলছে ডিটেইল ডিজাইন ও ভূমি অধিগ্রহণের। বিমানবন্দর, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এই পাতালরেল। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাতালরেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। সুড়ঙ্গপথে এটি সরাসরি যুক্ত হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে। এই টার্মিনাল বর্তমানে নির্মাণাধীন, যা মেট্রোরেল লাইন-১-এর একটি অংশ। মেট্রোরেল লাইন-১-এর আরেকটি অংশ বিমানবন্দর থেকে জোয়ারসাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল হয়ে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। উড়াল অংশ থেকে নেমে এটিও যুক্ত থাকবে তৃতীয় টার্মিনালের সুড়ঙ্গপথের সঙ্গে। এতে বিদেশগামী বা বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা স্বচ্ছন্দেই পাতালরেল ধরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবেন। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুতেই এর মূল কাজ শুরু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনও হতে পারে এ প্রকল্পের মূল কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, যা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা করছি ২০২২ সালের মার্চে ঢাকায় পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু করব। সবার আগে বানানো হবে ডিপো। এরপর পর্যায়ক্রমে পাতাল রেলপথ, স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর কাজ শুরু হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু করতে পারলে পাতালরেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে ২০২৬ সালে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে যাবে বলে তিনি মনে করেন। সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী এ প্রকল্পে (মেট্রোরেল লাইন-১) ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে ঢাকায় প্রথম পাতাল রেলপথের নির্মাণ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম প্যাকেজে ডিপোর ভূমি উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে ডিপোর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে এর প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে জাইকা ও অন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সূত্র জানায়, ঢাকায় পাতালরেলের জন্য ২৫টি ট্রেন কেনা হবে। প্রতিটি ট্রেনে ৮টি করে কোচ থাকবে। একেকটি ট্রেনে একসঙ্গে ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আর পুরো লাইন দিয়ে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে ঢাকা শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা যেমন সহজ হবে। কমে আসবে যানজটের ভোগান্তি। সাশ্রয় হবে সময় ও যাতায়াতের খরচ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি পরিবেশসম্মত বাসযোগ্য নগরী প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা, যার অধিকাংশ আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। আর দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বাকিটার জোগান।
ডিএমটিসিএলের অগ্রগতি প্রতিবেদনের (আগস্ট) তথ্যমতে, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রুটেই নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম পাতালরেল। এর পর্যায়ক্রমে আরও প্রায় ৪১ কিলোমিটার পাতালরেল নির্মিত হবে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে। তখন পাতালরেলের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৬১ কিলোমিটার। এই রুটে মোট স্টেশন থাকবে ১২টি। থাকবে ইন্টারচেঞ্জ। এই ইন্টারচেঞ্জ ব্যবহার করে বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচল রুট এবং পূর্বাচল রুট থেকে বিমানবন্দর ও কমলাপুর রুটে ঢুকতে পারবে ট্রেনগুলো। উভয় রুটের বিস্তারিত স্টাডি, সার্ভে ও বেসিক ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। মূল ডিজাইনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডিটেইল ডিজাইনের কাজ এগিয়েছে ৭৭ শতাংশ। পাতালরেলের ডিপো ও ডিপো অ্যাকসেস করিডর নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণখালী মৌজায় প্রায় ৯৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের জন্য বিদেশি একটি সংস্থাকে নিয়োগও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।