ডেস্ক নিউজ
ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করে দায়ের করা মামলা ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগ মুজিববর্ষেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। শুরুতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো চিহ্নিত করে ডাটাবেজের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরে সেসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনি লড়াই চালানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করে দায়ের করা রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তী সময়ে সব মামলাই এই ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এজন্য ডাটাবেজ ও সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনসহ ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আইনের একটি তালিকাও ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এসব আইনের কোনোটির জন্য বিধিমালা তৈরিরও কাজ চলছে। সাধারণ মানুষকে দ্রুত সেবা দেওয়ার জন্য ভূমি সংক্রান্ত আইনগুলোর একটি কোড নম্বর প্রকাশ করা হবে। ২০২০ ও ২০২১ সালের মার্চ মাসকে সেবা মাস হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতর ও সংস্থা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করবে। মুজিববর্ষের পরও এই মার্চ মাসকে সেবা মাস ঘোষণা করে মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এছাড়া পালন করা হবে ভূমি সেবা সপ্তাহ। তেজগাঁওয়ে যে ভূমি ভবন নির্মিত হচ্ছে সেটার সামনে বঙ্গবন্ধুর একটি বড় ম্যুরাল বা ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থাগুলোর শূন্যপদ পূরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে এই মুজিববর্ষেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও ডিজিটাইজেশন করতে চায় সরকার। এরইমধ্যে ‘ভিশন ২০২১’ অর্জনের জন্য ভূমি সেবাগুলোকে ডিজিটাইজেশনের অংশ হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ভূমি সংস্কার বোর্ডের অধীনে ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর থেকে ই-মিউটেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ বছরের ১৭ মার্চ (২০২০) থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বিভাগের ৩০০টি উপজেলা ও সার্কেলে শতভাগ ই-নামজারি সেবা চালু করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
পুরোপুরি ই-নামজারির কার্যক্রম সম্ভব হলে উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীরা ই-নামজারির সিস্টেমের মাধ্যমে সহজে, দ্রুত নির্ভুলভাবে অনলাইন নামজারির কাজগুলো করতে পারবেন। সেবা-প্রত্যাশী নাগরিকরা ঘরে বসে কিংবা যেকোনও ডিজিটাল সেন্টার থেকে নামজারির আবেদন জমা দেওয়ার পাশাপাশি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন। এছাড়া, এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড ও বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) নামজারি কার্যক্রম মনিটরিং করার পাশাপাশি বহুমাত্রিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারবেন।
মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগ সূত্র জানায়, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন-২০০১ অনুযায়ী প্রত্যর্পণ কার্যক্রম চলমান থাকায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী পাওয়া সরকারি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা এখনও সম্পন্ন করা যায়নি। ২০২১ সালের ১৭ মার্চের মধ্যে (মুজিববর্ষে) অর্পিত সম্পত্তি আইন অনুযায়ী পাওয়া সরকারি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা তৈরির কাজ শেষ করা হবে। এ আইনের বিধিমালা তৈরির কাজও চলমান রয়েছে।
ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত কর্মসূচি নিয়ে বুকলেট ও পুস্তিকা প্রকাশ করা হবে। জাতির জনকের ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে গৃহীত কার্যক্রম, ভূমি সংস্কার ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের গৃহীত ও বাস্তবায়িত কার্যক্রমের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদ, উপকারভোগী কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের অংশীজনদের অংশগ্রহণে দুই দিনের জাতীয় ভূমি সম্মেলনের আয়োজন করা হবে মুজিববর্ষে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের মামলাগুলো ডাটাবেজের অন্তর্ভুক্ত করাসহ বিভিন্ন আইন ও বিধিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. রাশেদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুজিববর্ষকে সামনে রেখে অনেক কাজই হাতে নিয়েছেন তারা। এরমধ্যে আইন সংস্কার ও বিধিমালা তৈরির কাজও চলছে। বিশেষ করে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। সেজন্য সফটওয়্যার তৈরির কাজও চলছে।’ মুজিববর্ষেই এই কাজ শেষ করতে চান বলেও তিনি জানান।