ডেস্ক নিউজ
ভুটানকে বাইরে রেখে ত্রিদেশীয় ট্রানজিট চালু করছে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল। এ জন্য নতুন করে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত বাংলাদেশের দেয়া খসড়ায় সম্মতি জানিয়েছে ভারত। এখন নেপালের সম্মতি পেলে প্রথমে যাত্রীবাহী ও পরবর্তী সময়ে পণ্যবাহী যান চলাচল শুরু হবে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে ২০১৫ সালের জুনে মোটর ভেহিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) সই হলেও তা বাস্তবায়নে ভুটান পিছিয়ে গেছে। সড়ক অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ ও জনজীবনের শান্তি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ভুটানের পার্লামেন্ট এই চুক্তি অনুমোদন করেনি। এখন বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল (বিআইএন) ত্রিদেশীয় ট্রানজিটের উদ্যোগ নিয়েছে। ভুটান তার সুবিধামতো সময়ে এটাতে যুক্ত হতে পারবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে এ ব্যাপারে বৈঠক হয়েছিল উল্লেখ করে তারা জানান, এতে সিদ্ধান্ত হয়, তিন দেশ একটি এমওইউ সই করবে। এতে পরবর্তী সময়ে ভুটানের যোগ দেয়ার সুযোগ রাখা হবে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ এমওইউ’র খসড়া চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য ভারত ও নেপালে পাঠিয়েছে। ভারত ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে। এখন আমরা নেপালের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছি। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নেপালের সাড়া পেতে সময় লাগছে।
কর্মকর্তারা জানান, এমওইউ’র আওতায় যাত্রীবাহী যান চলাচলের প্রটোকল প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের বাস ভারতের ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি কাঠমান্ডু যেতে পারবে। তেমনি কাঠমান্ডু থেকেও নেপালের বাস বাংলাদেশে আসতে পারবে। আর পণ্যবাহী যান চলাচলের প্রটোকল নিয়ে এখনো কাজ চলছে। এটি হয়ে গেলে বাংলাদেশ বা নেপালের ট্রাকও একইভাবে যাতায়াত করতে পারবে। এমভিএ’র আওতায় তিন দেশের যানবাহন পরস্পরের দেশে চলাচলের সুযোগ পাবে। নিরাপত্তা, বীমা, এক্সেল লোডÑ এগুলো প্রটোকলে বিস্তারিত থাকে। বর্তমানে নেপালের সাথে সংযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কেবল বাংলাবান্ধা-কাকড়ভিটা রুট ব্যবহার করতে হয়। কাকড়ভিটায় যানজট থাকায় এখন বাংলাদেশ আরো পশ্চিমে রুট চেয়েছে।
নেপাল ও ভুটানের সাথে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটিতে দিল্লির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে উল্লেখ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময়ে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাই স্বামী বলেছেন, বিবিআইএন উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় এই কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। নেপাল ও ভুটানের সাথে ভারতের মোটর ভেহিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট রয়েছে। এর আওতায় তিন দেশের ট্রাক সরাসরি পরস্পরের দেশে যাতায়াত করছে। এখন এতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর এটা করা গেলে বাংলাদেশ বেশ লাভবান হবে। তবে সীমান্ত পাড়ি দিতে হলে কিছু বিধিবদ্ধ নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমন, ভারতের একটি ট্রাক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুর্ঘটনায় পড়লে কোন বীমা কোম্পানি দায় নেবে? এ জন্য যানবাহনের নিবন্ধন, বীমা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। তাই বিবিআইএন এমভিএ’র বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড আন্তঃদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ : এ দিকে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড আন্তঃদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে ভারত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ভারত জানতে চেয়েছে, সীমান্তের কোন দিক দিয়ে বাংলাদেশ এই মহাসড়কে যুক্ত হতে চায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আন্তঃদেশীয় এই মহাসড়কে যুক্ত হতে বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে তিনটি রুটকে বিবেচনা করছে। এগুলো হলোÑ তামাবিল-ডাওকি, শেওলা-সুতারকান্দি এবং আখাউড়া-আগরতলা। এর মধ্যে শেওলা-সুতারকান্দি সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথ হবে। এটি মৌলভীবাজার-আসাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশকে আন্তঃদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত করবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সংযুক্তি বাড়াতে বাংলাদেশ এই মহাসড়কে যুক্ত হতে চায়।
গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এতে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড আন্তঃদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ। এ জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মহাসড়কে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে ভারত ছাড়াও মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কৌশলগত স্বার্থেই এই মহাসড়কে যুক্ত হতে চায় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন।
দিল্লির পূর্বমুখী নীতির আওতায় ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড (আইএমটি) ত্রিদেশীয় মহাসড়কের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মনিপুরী রাজ্যের ইম্ফল থেকে শুরু হয়ে মিয়ানমারের মান্দালে হয়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে পৌঁছাবে। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের অবস্থা মোটামুটি ভালো। এর মধ্যে ইম্ফল থেকে মান্দালে ৫৮৪ কিলোমিটার এবং মান্দালে থেকে ব্যাংকক পর্যন্ত এক হাজার ৩৯৭ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। মিয়ানমার অংশে ১০১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে, যা চার লেনে উন্নীত করার কাজ করছে ভারত। এই মহাসড়কটিকে কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। থাইল্যান্ড থেকে কম্বোডিয়া হয়ে ভিয়েতনাম পর্যন্ত মহাসড়কটি ২০১৫ সালে চালু হয়েছে। ভারতের এই প্রস্তাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সমর্থন রয়েছে।
বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর স্থাপনের উদ্যোগ ঝিমিয়ে পড়ার কারণে ঢাকা পূর্বমুখী নীতি বাস্তবায়নের জন্য আইএমটিতে যোগ দিতে আগ্রহী। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে (বিআরএফ) যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এর ফলে চীনের বৃহত্তর কানেক্টিভিটি উদ্যোগ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের তালিকা থেকে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরকে বাদ দেয়া হয়েছে। বিসিআইএমের মাধ্যমে ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিংকে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।