ডেস্ক নিউজ
দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্রবাদী গোষ্ঠী নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঠেকাতে থানাসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে সিলেটের কয়েকটি থানায় মেশিনগান পোস্ট বসানো হয়েছে। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা ও চট্টগ্রামেও নিরাপত্তা জোরদারে বালু ও মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এলএমজি পোস্ট। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের থানাগুলোয় নিরাপত্তা ও জনবল বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতার। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রম। গুলশান, বারিধারার মতো স্পর্শকাতর স্থানগুলোয় পুলিশের চেকপোস্ট ও একাধিক মোবাইল টিম কাজ করছে। সারা দেশের ৬০০ থানায় ২৪ ঘণ্টাই সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। ৮ মার্চ সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) আওতাধীন ছয়টিসহ জেলার ১১ থানা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় মেশিনগান পোস্ট বসানো হয়। সুনামগঞ্জের ছাতক ও ফরিদপুরের সালথা থানায় হামলার ঘটনা ছাড়াও ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ঘটনার পরই থানা এবং সরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্রবাদী গোষ্ঠী নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদ নষ্ট করেছে। এমন ঘটনা ঠেকাতে বিশেষ নিরাপত্তা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সিলেটের পর ঢাকা মহানগরীর থানাগুলোয় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। থানার আশপাশে বাড়ানো হয়েছে মোবাইল টিম।
নিরাপত্তামূলক এ কার্যক্রম অন্যান্য থানায় এখনো বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ওপর বর্বরোচিত হামলা আমরা দেখেছি। থানা, ফাঁড়িসহ সরকারি স্থাপনার ওপরও চালানো হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। ভবিষ্যতে এ ধরনের যে কোনো সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে পুলিশ অধিকতর সতর্ক রয়েছে। এ সতর্কতার অংশ হিসেবেই থানাসহ পুলিশ স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।’
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য জেলা শহরের মতো ডিএমপিতে থানায় থানায় নিরাপত্তা চৌকি বসানো কিংবা ভারী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী ৮ এপ্রিল থেকে ঢাকার থানাগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়। থানায় ঢোকার আগে প্রত্যেকের নাম-পরিচয় নিশ্চিত ও তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া থানায় পুলিশের উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে। তবে সব থানায় নয়, অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ থানাগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিমানবন্দর, বাড্ডা, বংশাল, চকবাজার, দারুসসালাম, গুলশান, হাতিরঝিল, যাত্রাবাড়ী, কলাবাগান, খিলগাঁও, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, পল্টন, রমনা মডেল, নিউমার্কেট, শাহবাগ, সূত্রাপুর, ভাটারা, উত্তরখান, দক্ষিণখানসহ প্রায় ৩০টি থানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, ৭ এপ্রিল পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের থানাসহ পুলিশের অন্যান্য স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেন।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কয়েকটি হামলা ঘটনার পরই হেডকোয়ার্টার্স থেকে থানাগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার ও যে কোনো ধরনের হামলা মোকাবিলায় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। এর পরই আমরা স্থানীয়ভাবে পর্যালোচনা করে নিজস্ব উদ্যোগে থানার সামনে বালু ও মাটি দিয়ে এলএমজি পোস্ট নির্মাণ করাই।’
সিলেট ও ঢাকার পরই চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সব থানা, ফাঁড়ি ও স্থাপনায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ।
৯ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ জেলার সব থানা ভবন, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে এলএমজি পোস্ট বসানো হয়। এসব পোস্টে ভারী অস্ত্রসহ অন্তত দুজন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।